ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সেপ্টেম্বরে কমবে সরকারের ব্যাংক ঋণ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯
সেপ্টেম্বরে কমবে সরকারের ব্যাংক ঋণ

ঢাকা: ট্রেজারি বন্ড ও বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়ায় বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণ আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে কমে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিলাম পঞ্জিকা মোতাবেক অর্থ মন্ত্রণালয় সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাত থেকে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যেখানে অর্থবছর শুরুর প্রথম ৫০ দিনেই ঋণ নিয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

পঞ্জিকা অনুসারে সরকার সেপ্টেম্বরে ট্রেজারি বন্ড ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ১৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে।

ট্রেজারি বিল এক ধরনের স্বল্পমেয়াদী শর্তহীন সরকারি ঋণপত্র। স্বল্পকালীন বাজেট ঘাটতি মেটানো বা অন্যান্য প্রয়োজনে স্বল্পকালীন তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশে সরকার ট্রেজারি বিল ইস্যু ও বিক্রি করে। সরকার এ বিলে মেয়াদান্তে তার ধারককে অভিহিত মূল্য ফেরত দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ দুই হাজার ৩৪০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ায় গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ’র এক হাজার ৫৫০ কোটি মোট ঋণ থেকে বাদ যাবে।

পঞ্জিকা বছর অনুসারে আগস্টে সরকারের মোট ব্যাংক ঋণ ছিল চার হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে যাওয়ায় সেপ্টেম্বরে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সরকারের হিসাবে মুনাফার চার হাজার ৩১৬ কোটি টাকা জমা করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ৭৯২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ ও বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনার কারণে মুনাফা বেড়েছে। ৯০ শতাংশের বেশি মুনাফা এসেছে বিশ্ব পুজিবাজারের বিনিয়োগ থেকে।

সরকার চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে ২৬ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। প্রথম দিকেই এ পরিমাণ ঋণ নেওয়ার কারণ হচ্ছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুনে অনেক ব্যয় সমন্বয় করতে হয়েছে।  সাধারণত আগের বছরের ব্যয়গুলো পরের বছরের জুলাইয়ে সমন্বয় করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের ব্যাংক ঋণের পুরো টাকাটাই বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে। এ জন্য মার্কেটে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এটা চলতে থাকলে এক সময় মার্কেটে প্রভাব পড়তে পারে।

অপরদিকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার কারণেও সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে। চলতি বছরের জুনে তিন হাজার ২০৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর আগের মাসে বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ২৫৮ কোটি টাকার। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে।

সরকার ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বছরের শুরুতে রাজস্ব আদায় কম, আবার খরচও কম। তারপরও ব্যাংক ঋণে এত টাকা নেওয়ার কারণটা আমরা ঠিক পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি না।  এভাবে চলতে থাকলে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ইতোমধ্যে অনেক দুর্বল। তারল্যের ওপর চাপ পড়বে।

সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের ব্যাংক ঋণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রিম করবে।

এ জন্য সরকার দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ছেড়ে ২৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বন্ড থেকে ১৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

সরকারের ঋণ সমন্বয় করতে বর্তমানে ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে চারটি ট্রেজারি বন্ড নিলাম করার জন্য লেনদেন হচ্ছে।

ট্রেজারি বন্ড ১৪ দিন, ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি হয়। বাজারে থাকা আরও পাঁচটি সরকারি বন্ডের মেয়াদ হচ্ছে ২, ৫ ও ১০ থেকে ১৫ বছর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিদায়ী অর্থবছরে দেশে কার্যরত দেশি-বিদেশি ব্যাংকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই মুনাফার টাকা সরকারি হিসাবে জমাও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯
এসই/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।