এ দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৪৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে তিন হাজার ৯১৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
তবে এখন দেখা যাচ্ছে, প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নে এডিবি’র দেওয়া অর্থের মধ্যে ৩১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেঁচে যাচ্ছে বা সাশ্রয় হয়েছে। সাশ্রয় হওয়া এই অর্থ বাংলাদেশ সরকার অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারবে, এই বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) সূত্র জানায়, প্রকল্প দুটি’র মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসছে সাড়ে নয় লাখ নতুন গ্রাহক। বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে সারা দেশে ২০১৯ সালের মধ্যে এসব গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার কথা।
সূত্র জানায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জন্য হাতে নেওয়া ‘বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতা বর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৪০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ হিসেবে দেবে দুই হাজার ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। এই প্রকল্পেও ১৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বেঁচে যাচ্ছে।
বেঁচে যাওয়া অর্থ বাংলাদেশ সরকার অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করবে। এই টাকা অন্য প্রকল্পে খরচের অনুমতিও দিয়েছে এডিবি। ফলে ব্যয় কমিয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।
শুধু এডিবি’র অর্থ নয়, এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থেও সাশ্রয় হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে ৫৯৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ব্যয় কমছে। এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৮০৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এডিবি ও সরকারি মিলিয়ে ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ব্যয় কমছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় অনেক সরঞ্জাম কমে মূল্যে পেয়েছি। আমরা যে ব্যয় ধরেছিলাম তা খরচ হয়নি। এ প্রকল্পের সাশ্রয় হওয়া অর্থ অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে। যতটুকু অর্থ প্রয়োজন ততটুকু অর্থই ব্যয় করেছি।
প্রকল্পের আওতাভুক্ত চার বিভাগের ৪২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এলাকায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। একইসঙ্গে বিতরণ লাইন উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, সিস্টেম লস কমানো এবং শিল্পায়ন, সেচ, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্বাক্ষরতা সুবিধা জোরদার হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রকল্পের আওতাধীন প্রধান কার্যক্রম হলো ছয় হাজার ৪৬৫ কিলোমিটার ১১ কেভির নতুন লাইন নির্মাণ করা। এছাড়া ২০ হাজার ৫৩৫ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের ক্ষমতাবর্ধন, পাঁচ লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ প্রদান এবং ১১ হাজার ৬১৯ বর্গমিটার আবাসিক বিল্ডিং তৈরি করা। প্রকল্পের আওতায় সব সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
অন্যদিকে ‘বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতায়ন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ)’ শীর্ষক আরেকটি একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে একই সময়ে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে- তিন হাজার ৭৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবির ঋণ এক হাজার ৮৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব মালামাল কেনা হয়ে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এখন সময় সাপেক্ষ মাত্র।
এই প্রকল্পেও এডিবি’র দেওয়া ১২৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। যা অন্য প্রকল্পে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে এডিবি।
তবে শুধু এডিবি’র অর্থই নয়, এই প্রকল্পের জন্য সরকারি খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকেও সাশ্রয় হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬১১ কোটি বা ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। ফলে এখন এই প্রকল্পের ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৪৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে ওই দুই প্রকল্পের জন্য এডিবি’র দেওয়া অর্থের মধ্যে ৩১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেঁচে যাচ্ছে। যা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) কোনো প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারবে সরকার।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (বিতরণ ও পরিচালনা) এসএম জাফর সাদেক বাংলানিউজকে বলেন, বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতায়ন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণে দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় অনেক সরঞ্জাম সস্তায় পাওয়া গেছে। ফলে এডিবি’র অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। সাশ্রয় হওয়া অর্থ ফেরত নেবে না এডিবি। এই অর্থ অন্য প্রকল্পে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছে তারা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এলক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গ্রামীণ জীবনের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পল্লী বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা প্রদান করে আসছে।
এ দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে পুরনো, জরাজীর্ণ এবং ওভারলোডেড বিতরণ লাইনের পুনর্বাসন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নিবিড়তা বাড়ানো হবে। ফলে বিতরণ ব্যবস্থায় সিস্টেম লস কমিয়ে আনার মাধ্যমে ৭৮টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্ষমতা ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে।
দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ সাশ্রয় হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯
এমআইএস/এসএ