উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের কম্বল গ্রাম খ্যাত শাঁওইল হাটের ছোট-বড় ব্যবসায়ী ও তাঁত পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ হাট কম্বল বিক্রির জন্য বিখ্যাত তাই হাটের নামকরণ করা হয়েছে ‘কম্বল গ্রামের হাট’।
প্রতি বছর শীতে সারাদেশে দুস্থদের মধ্যে যে সমস্ত কম্বল ও চাদর বিতরণ করা হয় তার সিংহ ভাগ তৈরি হয় আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল গ্রামে।
সত্তর দশকের শেষ দিকে আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল গ্রামে কয়েকজন ব্যক্তি কম্বল বানানোর তাঁত মেশিন স্থাপন করেন। এরপর থেকেই এ উপজেলার মানুষ পর্যায়ক্রমে নিজেদের এ পেশার সঙ্গে যুক্ত করতে থাকেন। এরপর থেকে এ গ্রামে তাঁত শিল্প ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এ উপজেলার তৈরি কম্বলসহ বিভিন্ন তাঁত বস্ত্র দেশে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে।
শাঁওল গ্রামের বাসিন্দা তমেজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ছোট বেলা থেকে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন তার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ এ ব্যবসা থেকে চালান তিনি।
শাঁওইল গ্রাম ঘুরে যায়, নারী-পুরুষ ও বুড়ো সবাই নিয়োজিত কম্বল ও চাদর তৈরির কাজে। এর মধ্যে কেউ সুতো গোছাতে ব্যস্ত আবার কেউ তাঁত মেশিনে বসে তৈরি করছেন কম্বল ও চাদর।
শাঁওইল গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা বেগম বলেন, তিনি ছোট বেলা থেকেই কম্বল ও চাদর তৈরির কাজ করছেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে কম্বল ও চাদর তৈরি করতে শিখেছেন। এটি তার জীবিকা নির্বাহের এক মাত্র উৎস। অন্যের বাড়ির তাঁতে কম্বল ও চাদর তৈরি করে তার ছোট ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালান তিনি।
শাঁওইল গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হান্নান মণ্ডলকে দেখা যায় তিনি খালি গায়ে চশমা পড়ে মাটিতে বসে চরকার মাধ্যমে সুতা গোছাতে ব্যস্ত।
তিনি বলেন, তার পরিবারের সবাই কম্বল ও চাদর তৈরির কাজের সঙ্গে নিয়োজিত। তার ছেলে, ছেলের বউ এবং বেতন ভুক্ত শ্রমিকরা তাঁতে কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, বুড়ো হয়ে গেছি, ছেলের হাতে এখন তাঁতের সব দায়িত্ব। ছেলেই এখন এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছু ব্যবসায়ী এ কম্বল ও চাদরগুলো গ্রামে ঘুরে-ঘুরে সংগ্রহ করে। এ কাজে নিয়োজিত কিছু পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ঘুরে বাড়ি বাড়ি থেকে কম্বল ও চাদর কেনেন। এ সব কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা অগ্রিম টাকা নেন। এর ফলে ওই ব্যবসায়ীদের কাছেই এ সব কম্বল ও চাদর বিক্রি করতে হয়। এ কারণে সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এলাকার তাঁত শিল্পীরা।
শাঁওইল গ্রামের ব্যবসায়ী তোজাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, সারাবছর এ গ্রামে কম্বল ও চাদরসহ অন্যান্য শীতের পোশাক তৈরির কাজ চলে। তবে মূলত শীতের শুরু থেকে চার মাস কম্বল ও চাদরের ব্যবসা জমজমাট থাকে।
সপ্তাহের রোববার ও বুধবার কম্বল ও চাদরের হাট বসে বগুড়ার সান্তাহারে বলেও জানান ব্যবসায়ী তোজাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
আরআইএস/