ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শাঁওইল গ্রামে কম্বল-চাদর তৈরিতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
শাঁওইল গ্রামে কম্বল-চাদর তৈরিতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ তাঁতের বসে কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত এক নারী। ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফ

বগুড়া: শীত নিবারণের জন্য দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য কেনা কম্বল ও চাদরের সিংহভাগ তৈরি হয় বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল গ্রামে। কয়েক মাস পরে শীত আসছে তাই বর্তমানে এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির নারী ও পুরুষ ঠকাস-ঠকাস শব্দে তৈরি করেছেন কম্বল-চাদর।

উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের কম্বল গ্রাম খ্যাত শাঁওইল হাটের ছোট-বড় ব্যবসায়ী ও তাঁত পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ হাট কম্বল বিক্রির জন্য বিখ্যাত তাই হাটের নামকরণ করা হয়েছে ‘কম্বল গ্রামের হাট’।

প্রতি বছর শীতে সারাদেশে দুস্থদের মধ্যে যে সমস্ত কম্বল ও চাদর বিতরণ করা হয় তার সিংহ ভাগ তৈরি হয় আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল গ্রামে।

এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ সারাবছর ধরে শীতের কম্বল ও চাদর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
চরকায় সুতা গোছাতে ব্যস্ত শাঁওইল গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হান্নান।                                          ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফসত্তর দশকের শেষ দিকে আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল গ্রামে কয়েকজন ব্যক্তি কম্বল বানানোর তাঁত মেশিন স্থাপন করেন। এরপর থেকেই এ উপজেলার মানুষ পর্যায়ক্রমে নিজেদের এ পেশার সঙ্গে যুক্ত করতে থাকেন। এরপর থেকে এ গ্রামে তাঁত শিল্প ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এ উপজেলার তৈরি কম্বলসহ বিভিন্ন তাঁত বস্ত্র দেশে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে।

শাঁওল গ্রামের বাসিন্দা তমেজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ছোট বেলা থেকে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন তার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ এ ব্যবসা থেকে চালান তিনি।

শাঁওইল গ্রাম ঘুরে যায়, নারী-পুরুষ ও বুড়ো সবাই নিয়োজিত কম্বল ও চাদর তৈরির কাজে। এর মধ্যে কেউ সুতো গোছাতে ব্যস্ত আবার কেউ তাঁত মেশিনে বসে তৈরি করছেন কম্বল ও চাদর।
সুতা গোছাতে ব্যস্ত শাঁওইল গ্রামের এক তাঁত শিল্পী।  ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফশাঁওইল গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা বেগম বলেন, তিনি ছোট বেলা থেকেই কম্বল ও চাদর তৈরির কাজ করছেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে কম্বল ও চাদর তৈরি করতে শিখেছেন। এটি তার জীবিকা নির্বাহের এক মাত্র উৎস। অন্যের বাড়ির তাঁতে কম্বল ও চাদর তৈরি করে তার ছোট ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালান তিনি।

শাঁওইল গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হান্নান মণ্ডলকে দেখা যায় তিনি খালি গায়ে চশমা পড়ে মাটিতে বসে চরকার মাধ্যমে সুতা গোছাতে ব্যস্ত।
 
তিনি বলেন, তার পরিবারের সবাই কম্বল ও চাদর তৈরির কাজের সঙ্গে নিয়োজিত। তার ছেলে, ছেলের বউ এবং বেতন ভুক্ত শ্রমিকরা তাঁতে কাজ করেন।
 
তিনি আরও বলেন, বুড়ো হয়ে গেছি, ছেলের হাতে এখন তাঁতের সব দায়িত্ব। ছেলেই এখন এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কম্বল ভাঁজ করছেন দুই তাঁত শিল্পী।  ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছু ব্যবসায়ী এ কম্বল ও চাদরগুলো গ্রামে ঘুরে-ঘুরে সংগ্রহ করে। এ কাজে নিয়োজিত কিছু পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ঘুরে বাড়ি বাড়ি থেকে কম্বল ও চাদর কেনেন। এ সব কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা অগ্রিম টাকা নেন। এর ফলে ওই ব্যবসায়ীদের কাছেই এ সব কম্বল ও চাদর বিক্রি করতে হয়। এ কারণে সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এলাকার তাঁত শিল্পীরা।

শাঁওইল গ্রামের ব্যবসায়ী তোজাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, সারাবছর এ গ্রামে কম্বল ও চাদরসহ অন্যান্য শীতের পোশাক তৈরির কাজ চলে। তবে মূলত শীতের শুরু থেকে চার মাস কম্বল ও চাদরের ব্যবসা জমজমাট থাকে।

সপ্তাহের রোববার ও বুধবার কম্বল ও চাদরের হাট বসে বগুড়ার সান্তাহারে বলেও জানান ব্যবসায়ী তোজাম।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।