জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞার সফলতাকে অনুসরণ করে সাগরের মূল্যবান মৎস সম্পদ সুরক্ষায় চলতি বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এসময়ে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি শুধু ইলিশ ধরা পড়ত জেলের জালে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ইলিশ ধরা বন্ধ করলেই চলবে না। এর বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। মূলকথা হলো- ভালো পরিবেশ থাকায় গত কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, এটাতে বেশ সফলতা আসছে। নজরদারি এভাবে চললে, পরিবেশের আরও উন্নতি হলে আগামীতে আরও বড় বড় ইলিশ বাজারে আসবে। উৎপাদন বাড়বে। সাধ্যের মধ্যে থাকবে ক্রেতার।
গত কয়েকদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাছ বাজার, বাড্ডা মাছ বাজার ও যাত্রাবাড়ী মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ ইলিশ বড় আকারের। যেগুলোর ওজন প্রায় ৭৫০ গ্রাম থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত। আর সবচেয়ে কম দেখা গেছে জাটকা। জাটকা বলতে লেজের শেষাংশ থেকে মাথা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির ইলিশকে বোঝানো হয়।
তবে ইলিশের আকার বড় হলেও দামটা তুলনামূলক বেশি। এক্ষেত্রে আরও কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাধারণ ক্রেতারা। এসব বাজারে পাইকারি দরে ৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ এক হাজার টাকা, দেড় কেজি সাইজের প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকা, দুই কেজি সাইজের ইলিশ দুই হাজার ৬০০ টাকা এবং আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে শুধু এ বছরই জেলের জালে বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে, তা কিন্তু নয়। গত দুই-তিন বছর ধরেই এ ধরনের ইলিশ বাজারে আসছে। মূলত জাটকা নিধন রোধ আর প্রজনন মৌসুমে অভিযান জোরদার করার ফলে বড় আকারের ইলিশ বাজারে। এছাড়া এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে বড় ইলিশের সরবরাহ আরও বাড়বে। এমনকি দামও থাকবে ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে।
এ বিষয়ে গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি প্রাণীর বড় হওয়ার জন্য ভালো পরিবেশের প্রয়োজন। এখন ভালো পরিবেশ থাকার কারণে আমরা বড় ইলিশ বাজারে দেখছি। এই ভালো পরিবেশ আর সরকারি উদ্যোগের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে আসবে ইলিশ।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে নদীর স্রোতের বিপরীত থেকে মা ইলিশ আসে ডিম দেওয়ার জন্য। এসময়টাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যাতে কেউ মাছ শিকার করতে না পারে। আবার এ সময়টাতে জেলেদের খাবারেরও ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া এটা যেনো পরিপূর্ণ হয়। তাদের খাবারের ব্যবস্থা না হলে চোরাই পথে জাটকা নিধন বন্ধ হবে না। যদি জেলের মা ইলিশ শিকার বন্ধ হয়, তারা যদি সহযোগিতা পায়, তবে আমরা সবাই লাভবান হবো।
জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে ৬৫ দিন সব মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এছাড়া অন্যান্য বছর ট্রলার গভীর সমুদ্রে গেলেও এবার মাছ ধরার ট্রলার ও বাণিজ্যিক ট্রলারকে যেতে দেওয়া হয়নি। আবার প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল ২২ দিন। এ হিসেবে বলা যায় ইলিশকে প্রকেক্ট করা সহজ হয়েছে। ইলিশ সমুদ্র থেকে ম্যাচিউরড (পরিপক্ব) হয়ে নদীতে আসছে। ডিম দেওয়ার পর আবার নিরাপদে যেতে পারছে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অভিযান জোরদারের ফলেই এই সফলতা। আমরা এখন বাজারে বড় বড় ইলিশ দেখছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
ইএআর/টিএ