তিনি বলেছেন, আমাদের সিদ্ধান্তটি হচ্ছে আমরা সব প্রকার পন্থা পরিহার করে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে সমাধান করা হবে। এতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। এসময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক, গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি, টেলিযোগাযোগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিটিআরসিতে সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং দুই অপারেটর বৈঠক করে। এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। এ জন্য এখানে সংবাদ সম্মেলন করা হলো।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছিলাম। তাদের সঙ্গে আমাদের সমাধানে আসা উচিত। যেখানে আমরাও হারবো না। তারাও হারবে না। আমাদের যেটুকু পাওনা, সেটা আমরা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবো। তারাও সেটা মেনে নেবে, আমরা সেটা বিশ্বাস করি। সেজন্যই আমরা আজকে এখানে বসেছি। আমাদের সিদ্ধান্তটি হচ্ছে আমরা সব প্রকার পন্থা পরিহার করে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে সমাধান করা হবে। বিটিআরসির যেটা পাওনা, সে বিষয়েও একই প্রক্রিয়ায় যাবো। এভাবে একটি সুন্দর সমাধানে আসবো। তারা ব্যবসা করবে, আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে তাদের আমরা যেটুকু সাহায্য করার দরকার, সেটুকু করবো।
আলাপ-আলোচনা ব্যর্থ হয়ে বিটিআরসি হার্ডলাইনে চলে গিয়েছিল, তারা শোকজও করেছে- এ বিষয়ে তাহলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা এখনও আছে। আমরা মনে করি অন্য কোনোভাবে গেলে অনেক সময় লাগবে। এতে কে লাভবান হবে, কে লুজার হবে, সেটা জানি না। তবে আমাদের লসের আশঙ্কা বেশি।
পাওনার ক্ষেত্রে সরকার ছাড় দেবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমার বলা ঠিক হবে না। আমরা একটা সমাধানের দিকে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বেশি দিন লাগবে না। দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে। এটা আমার ধারণা।
আদালতে যে মামলা রয়েছে, সে বিষয় কী হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আর আদালতে যাবো না। মামলা তারা প্রত্যাহার করবে। এটা না হলে তো আলোচনায় যেতে পারবো না। তাই বসে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করার চেষ্টা করবো। এ মুহূর্তে কতোদিনের মধ্যে এটা হবে, সেটা বলা মুশকিল। সমাধান অবশ্যই হবে। সেটা অবশ্যই দেশের বিরুদ্ধে যাবে না। তারাও জিতবে, আমরাও জিতবো। আমাদের যে ভুল বোঝাবুঝি আছে, সেটার অবসান ঘটিয়ে পূর্ণাঙ্গ সুষ্ঠু সমাধানে যাবো।
বিটিআরসি জানায়, অডিট আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসি’র ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে পাওনা ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব পাওনা ছিল। দীর্ঘদিনের এ পাওনা পরিশোধ না করায় গত ৪ জুলাই বিটিআরসি পাঁচটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানকে গ্রামীণফোন এবং রবির অনুকূলে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের মধ্যস্থতায় দুই অপারেটরের ব্যান্ডউইথ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৭ জুলাই সেই ব্যান্ডউইথ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর রাজস্ব বকেয়া আদায়ে গ্রামীণফোন ও রবির টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে গত ৫ সেপ্টেম্বর ৩০ দিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করে বিটিআরসি। পাওনা টাকা আদায় না হলে বিটিআরসি অপারেটর দু’টিতে প্রশাসক নিয়োগ করার চিন্তাও করছিল।
এরইমধ্যে অডিট আপত্তিতে পাওয়া রাজস্ব বকেয়া চাওয়াকে অযৌক্তিক ও ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে গ্রামীণফোন ও রবি পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। গত ২৫ অগাস্ট রবি এবং ২৬ অগাস্ট গ্রামীণফোন ঢাকার দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করে বলে অপারেটর দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
জিসিজি/টিএ