বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে হংকংয়ের পতাকাবাহী এ জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার বালিকপানান বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে এক সপ্তাহ পর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে প্রথম জাহাজ হিসেবে নোঙর করে।
শেষ বিকেলের দিকে জাহাজ থেকে কয়লা জেটির সংক্রিয় বেল্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে নেওয়া শুরু হয়েছে।
পায়রা বন্দরের একটি সূত্র জানায়, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রথম কয়লাবাহী জাহাজটি ফেয়ার ওয়ে বয়া অতিক্রম করে রাবনাবাদ চ্যানেলে সকাল নয়টায় প্রবেশ করে। এরপর জাহাজটির শুল্কায়নসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। জার্মানির ওল্ডেন ড্রাফট কেরিয়ার্স লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেনকন সেটারনস লিমিটেড পোর্ট এজেন্ট হিসেবে এ কয়লা আমদানি করেছে।
এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এ মালেক বলেন, আমরাই পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম, প্রকল্প পরিচালক শাহ্ আবদুল মওলা, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, চিফ হাইড্রোগ্রাফার লে. কমান্ডার মো. সাইফুল ইসলাম, বিসিপিসিএলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক চি ইউসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডক মাস্টার এস এম শরিফুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (বিসিপিসিএল) বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করবে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, আমরা যতদূর জানি বিসিপিসিএল জেটিতে অক্টোবর মাসে ৪টি জাহাজ আসবে। ডিসেম্বর মাসে ৮টি জাহাজ আসবে। মাসে সর্বোচ্চ ২০- ২২টি জাহাজ আনতে পারবো। ক্রমান্বয়ে জাহাজের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের পায়রা বন্দরের বাস্তবায়ন শুরু হলো।
তিনি আরও বলেন, পায়রা বন্দরের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি বন্দর। অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে এ বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ সুবিধাসহ একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জেটি, টার্মিনাল, সংযোগ সড়ক এবং আন্ধারমানিক নদের বালিয়াতলী-ইটবাড়িয়া পয়েন্টে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু নির্মাণের কার্যক্রম চলছে।
এ ছাড়াও পিপিপি পদ্ধতিতে একটি কয়লা টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এই দু’টি টার্মিনাল নির্মাণসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষে ২০২২ সাল নাগাদ পায়রা পূর্ণাঙ্গ সমুদ্র বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা দিনে দিনে ব্যস্ততম বন্দরের রূপ নেবে। এ বন্দর পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের মুরিং পয়েন্টে শিপ টু শিপ লাইটারেজের মাধ্যমে আংশিক অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৪টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম পায়রা বন্দরের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ফসল হলো পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করার জন্য গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ১৬০ কি. মি. দীর্ঘ বিদ্যুৎ লাইন
টানতে হয়েছে। রাস্তাঘাট, নদী-নালা, বাড়ি-ঘর অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। এ জন্য সময় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। কয়লা আমদানির মধ্য দিয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
এসএইচ