বাজারে হাঁকডাক আর নিজেদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা করে বেশ আয়োজন করেই ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তারা।
ভোজন রসিকরা চড়া দাম দিয়ে হলেও ইলিশ কিনবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাদের।
বিষয়টি ঠিক এমন ঠেকেছে যেন- ক্রেতাদের ডেকেও লোকসানের কাঁটা নিজেদের গলা থেকে ছাড়াতে পারছেন না বিক্রেতারা। অন্য মাছ না কিনে যারা অধিক লাভের আশায় শুধু ইলিশ কিনেছিলেন, তাদের প্রত্যকের কপালেই পড়েছে এখন হাত।
কারণ হিসেবে একাধিক মাছবিক্রেতা জানান, যে মাছ পাইকারি দামে কেজিতে ৯৫০ বা ৯০০ টাকায় কেনা হয়েছে বাজারে ক্রেতারা তা ৫০০ টাকাও বলেন না! আর ৫০০ টাকা কেজিতে যে মাছ কেনা হয়েছে তা ক্রেতারা ৩ থেকে ঊর্ধ্বে সাড়ে তিনশ টাকা দাম বলে চলে যান। হাজারবার পিছু ডাকলেও ভুলেও ফিরে তাকান না ক্রেতারা। বিক্রেতাদের দাবি, যদি তারা এখন অন্তত ইলিশগুলো কেনা দামেও বিক্রি করতে পারতেন তবে, সব মাছ বিক্রি করে দিতেন। কিন্তু ক্রেতাদের ইলিশের প্রতি ঝোঁক না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
মাছ বেচা হোক বা না হোক, এরপরও বাজারে পাকাতে বসলেই তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয় প্রতিদিন। এরমধ্যে রয়েছে মাছ সংরক্ষণের বরফ-বক্স ও কর্মচারীর বেতনসহ নিজের পকেট খরচ। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্তমার সময় ইলিশ মাছের জন্য সেরা।
এর আগে স্মরণকালে এত বড় ধরনের ইলিশ বাজারে চোখে পড়েনি। বর্তমান সময়ে দেড় কেজি ওজনেরও ইলিশ অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। তবে, আধা কেজির নিচে বাজারে এখন আর কোনো ইলিশ নেই।
বাজারে মাছবিক্রেতারা সাত থেকে সাড়ে সাতশো গ্রামের ইলিশের দাম চাচ্ছেন ৫০০ টাকা কেজি। অপরদিকে এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজিতে চাওয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। তবে, ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
নেত্রকোনা শহরের মেঁছুয়া বাজারের রূপালি ইলিশ বিক্রেতা সুলতান মুন্সি, আব্দুস সাত্তার ও হালিম মিয়া।
বাংলানিউজকে তারা জানান, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গার ইলিশ নেত্রকোনার বিভিন্ন বাজারে রয়েছে। লাভের আশায় ইলিশ কিনে সুলতান, ফিরোজ ও হালিম তারা প্রত্যেকে কয়েক লক্ষাধিক করে অর্থদণ্ডে পড়েছেন। প্রচুর পরিমাণে মাছ সংরক্ষণ রয়েছে বিক্রেতাদের কাছে। তবে, ক্রেতা নেই।
সুলতান বাংলানিউজকে জানান, ২০০ কেজি ইলিশ কিনেছেন একমাস হয়েছে। কম অর্ধেকও বিক্রি করতেন পারেননি আজও। এতে তার দু’লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। এরচেয়ে অন্য মাছের পেছনে টাকাটা ইনভেস্ট করলে আসল উঠে লাভের ঘরে থাকতো বলে তার মন্তব্য।
মাছবিক্রেতা আবু সিদ্দিক জানান, অন্যান্য বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা। প্রত্যেকেই ২ থেকে ৪/৫ লাখ টাকারও ইলিশ কিনেছেন। তারা প্রত্যেকেই এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন। পথ খুঁজছেন কী হতে পারে আসল টাকা তোলে আনার প্রক্রিয়া।
নির্মলেন্দু গুণের ‘কবিতা কুঞ্জে’র গ্রন্থাগারিক মাহমুদুল হাসান, ব্যবসায়ী আলী নেওয়াজ বাংলানিউবকে জানান, দেশে এখন ইলিশের ঘাটতি নেই বরং সারাদেশে হিসাব ছাড়া ইলিশ রয়েছে।
সেক্ষেত্রে দাম আরও কমালে ক্রেতারা ঝুঁকবে ইলিশের দিকে। আর এতে মাছ বিক্রেতাদেরও গলায় আটকে যাওয়া লোকসানের কাঁটাটা নেমে যাবে বলে মন্তব্য মাছ কিনতে আসা এই ক্রেতাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
এএটি