২২ দিন মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ উপলক্ষে সোমবার (০৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ সময়ে মা ইলিশের ৮০ শতাংশ ডিম পাড়ে। তারা ডিম পাড়ে মূলত মিঠাপানিতে।
তিনি বলেন, এই ২২ দিন মাঠ পর্যায়ে অভিযানে সহায়তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলায় অতিরিক্ত ৪৭ জন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযান সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি জাতীয় মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ইলিশের প্রজননকালে অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ৩৬টি জেলার সব নদ-নদীতে দিনে ও রাতে অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এ সময় স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও অভিযান পরিচালনা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারা বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। বিগত ১০ বছরে ইলিশ উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে এর অবদান শতকরা ১ ভাগ।
ইলিশের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন প্রদান করেছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বশীর্ষে। পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের অধিক ইলিশ উৎপাদনকারী হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিত।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ত্বরান্বিত করতে চলতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও মজুত নিষিদ্ধ করে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, চলতি বছর ইতোমধ্যে মা ইলিশধরা নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ৩৫ জেলার ১৪৭ উপজেলায় চার লাখ আট হাজার ৩২৯টি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে আট হাজার ১৬৭ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ এবং জাটকা ধরা নিষিদ্ধকালীন জাটকা ও ইলিশসমৃদ্ধ এলাকার জেলেদের জন্য প্রতিবছর পরিবারপ্রতি ৪০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জাটকাধরা নিষিদ্ধকালীন আট মাস দেশের ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত মোট ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারে ৪০ কেজি হারে চার মাসের জন্য প্রায় ৩৯ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ বছরই প্রথমবারের মত সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে উপকূলীয় চার লাখ ১৪ হাজার ৭৮৪টি জেলে পরিবারকে ৩৫ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে ১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহণের সময় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন থাকলেও সরকারের ব্যবস্থাপনায় তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় ৯ বছরের ব্যবধানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা এবং সামুদ্রিক জলাঞ্চলে ৬৫ দিন মাছধরা নিষিদ্ধ করায় গত বছর প্রায় ৪৮ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে সক্ষম এবং জাটকাও বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন গত বছরে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি ডিম উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৯
এমআইএইচ/আরবি/