কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল-জুন মাসে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৫ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আদায় হয়েছে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।
এদিকে খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিংখাত আরও বেশি চাপে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য এখনই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে সামনের দিনে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিংখাতে কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য ‘ইচ্ছাকৃত’ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
আহসান এইচ মানসুর বলেন, অর্থ ঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত। উচ্চ আদালতে রিট করার বিষয়েও আইনের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশে ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।
সাধারণত ব্যাংকগুলো তাদের হিসাবের খাতা সামঞ্জস্য রাখতে জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করে থাকে।
তবে এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিল করার কারণে ব্যাংকগুলোর আদায় কার্যক্রম খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না। আর এতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ঋণ খেলাপিরা।
নীতিমালার আলোকে খেলাপি গ্রাহকরা এখন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। আগে ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
একই সঙ্গে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের সুদ আদায় করা যাবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। যা আগে সর্বনিন্ম ছিল ১২ থেকে ১৬ শতাংশ।
এসব ঋণ পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১০ বছর। পুনঃতফসিল আবেদনের প্রথম বছর এই হিসাবের বাইরে।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের জন্য এই সুবিধা চলতি বছরের মে মাসে তৃতীয় প্রান্তিক থেকে ঘোষণা করেছে। তবে খেলাপিরা এই সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন।
অপরদিকে খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাওয়ার কারণে দেশের ব্যাংকিংখাতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
এবিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারের উচিত অর্থ ঋণ আদালতের বিচারকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা।
আর আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খুব অল্প সময়ে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সহায়তা করবে বলে মনে করেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
অপরদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে। খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সবশেষ হিসাব পাওয়া গেলে আদায়ের পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
এসই/জেডএস