ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনায় গতি কমেছে সবুজ অর্থায়নে

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
করোনায় গতি কমেছে সবুজ অর্থায়নে

ঢাকা: মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গতি কমেছে সবুজ অর্থায়নেরও (গ্রিন ফাইন্যান্স)। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রিন ব্যাংক কার্যক্রম গতিশীল করতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার প্রতিফলন হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর সবুজ অর্থায়নের (গ্রিন ব্যাংকিং) পরিমাণ দাড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩১ শতাংশ বেশি।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিংখাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমান ১১ লাখ ৪১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকার মধ্যে সবুজ অর্থায়ন মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত বলেন, সবুজ অর্থায়নের (গ্রিন ব্যাংকিং) এই চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ প্রতিফলিত করে না।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের এই হিসাব করা হয়েছে। আগামীদিনে সবুজ অর্থায়ন বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবুজ অর্থায়ন নীতিমালা করেছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

গ্রিন ব্যাংকিং এমন এক ধরণের ব্যাংকিং কার্যক্রম যা পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সমস্ত সামাজিক, পরিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়কে বিবেচনা করে। একে নৈতিক বা টেকসই ব্যাংকিংও বলা হয়।

চলমান করোনা ভাইরাস মহামারি দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট ব্যাংকগুলোর সবুজ অর্থায়ন (গ্রিন ফাইন্যান্স) উদ্যোগকে মারাত্মক ধাক্কাও দিয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো ২৩২০ কোটি টাকা সবুজ কারখানায় অর্থায়ন করেছে; যা তিনমাস আগের তুলনায় ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম।  জুন প্রান্তিকে বিতরণ করেছে ২৫০২ কোটি টাকা, মার্চ প্রান্তিকে ২৮৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

এক বছর আগের তুলনায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সবুজ অর্থায়ন ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ব্যাংকগুলো তখন বিতরণ করেছে ১৯১০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারীখাতের আইএফআইসি ব্যাংক ১৩৫ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ১৪৯ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১৭০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ১৭৪ কোটি টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১৮৮ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক ৪৫১ কোটি টাকা এবং বিদেশীখাতের এইচএসবিসি বিতরণ করেছে ৫২১ কোটি টাকার ঋণ।

এবিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে দেশে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, তাই ব্যাংকগুলোকে সবুজ অর্থায়নে জোর দেওয়া উচিত। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে সবুজ অর্থায়ন করতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।

সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক এমটিবি। সবুজ অর্থায়ন কর্মসূচিতে সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করবে ব্যাংকটি।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সবুজ অর্থায়নখাতে খেলাপী ঋণের পরিমান দাড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপী ঋণের ১ শতাংশেরও কম। ব্যাংকিংখাতে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপী ঋণের পরিমান ৯৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় সবুজ কারখানা স্থাপনে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ শুরু হয়। দেশের অর্থনীতির আকার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সর্বশেষ গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই উদ্যোগ এখনও গতি অর্জন করতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
এসই/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।