সিলেট: উচ্চ আদালতে রীট পিটিশনে আটকে গেলো সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ন্যাচারাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেডের (এনজিএফএফএল) বিক্রয় প্রক্রিয়া।
বিদায়ী বছরের শেষ কর্মদিবসে উচ্চ আদালত সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) তিনজনকে পুরাতন সার কারখানার মালামাল প্রথম দরদাতাকে বিক্রির আদেশ না দিতে রুল জারি করেছেন।
বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ (৩১ ডিসেম্বর) এ আদেশ প্রদান করেন। এতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিসিআইসির চেয়ারম্যান ও শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে মেসার্স আতাউল্লাহর পক্ষে বিক্রির আদেশ না দিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে জবাব না দিলে আদালত তা নিস্পত্তি করবেন বলে রুলনিশি জারি করেন।
সার কারখানার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিমি নির্মাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিল্লুর রহমানের রিটের প্রেক্ষিতে আদালত এই রুল জারি করেন। বাদি পক্ষের আইনজীবী এম. শাখায়াত হোসেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উচ্চ আদালতের আদেশ শনিবার (২ জানুয়ারি) হাতে পেয়েছেন বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান র্নির্দিষ্ট সময়ে টাকা দিতে না পারায় নির্দিষ্ট অথরিটির কাছে আবেদন করে সময়ে নিয়েছে। এখনও কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তবে এখন বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। আদালত যে নির্দেশনা দেন তা পালন করতে হবে।
ফেঞ্চুগঞ্জ ন্যাচারাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেডের যন্ত্রপাতি বিকল থাকা ও অব্যাহত লোকসানের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানাটির মালামাল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর (এনজিএফএফএল) বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এতে ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দরপত্র খোলা হয় গত ১৪ অক্টোবর। তন্মধ্যে ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় সিলেটের ‘মেসার্স আতাউল্লাহ’নামের প্রতিষ্ঠান। ভ্যাটসহ টাকার পরিমাণ দাড়ায় ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা।
সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স আতাউল্লাহ শতকোটি টাকার দরপত্র পাওয়ার পর শর্তভঙ্গ করায় অভিযোগ উঠে। ফলে আদালতের দ্বারস্থ হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা রিমি নির্মাণ সংস্থা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান। ফলে এনজিএফএফএল’র যন্ত্রপাতি বিক্রির কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে বিক্রির আদেশ না দিতে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।
সূত্র জানায়, দরদাতা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে আহ্বানকৃত দরপত্রের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়াতে নিরাপত্তা জামানতের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্টরা তা না করে সময় বৃদ্ধি করে দেন। তাতে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকগণ ক্ষুব্দ হন। সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার দরপত্র জামানত বাতিল না করে, তাকে নোটিফিকেশন অব এ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন সার কারখানার এমডি।
কাগজপত্রে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ দারদাতা প্রতিষ্ঠানটি ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ব্যাংক নিরাপত্তা জামানতের ১০ ভাগ হিসেবে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭ হাজার ৫শ টাকা জমা দেওয়ার কথা। ওই সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দিলে শর্ত মোতাবেক দরপত্র জামানতের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত হবে।
কিন্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার দরপত্র জামানত বাতিল না করে তাকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) প্রদান করেন সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এ অবস্থায় শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ ও কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে মালামাল বিক্রির আদেশ না দিতে উচ্চ আদালতে রিট (পিটিশন নং-১০২৬০/২০) করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা রিমি নির্মাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘন্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২১
এনইউ/ইউবি