ফেনী: বোরো ধান আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফেনী সদরের দুটি গ্রামে ‘সমলয়ে চাষাবাদ’ নামের নতুন এক পদ্ধতিতে প্রণোদনা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক স্বল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারবে বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ১২ লাখ ২১ হাজার টাকার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া ও ভালুকিয়ায় ৫০ একর জমিতে প্রদর্শনীর কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভ করবে কৃষক। এতে বোরো আবাদে আগ্রহ বাড়বে কৃষকের।
সমলয় চাষ পদ্ধতির উপযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা প্লাস্টিকের শেডে বীজ বপণ করে ১০/১৫ দিনের মধ্যে ধানের চারা উৎপাদন করা সম্ভব।
পরবর্তী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন। এতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল আবাদ করতে পারবেন।
২০১৯ সালে পরীক্ষামূলক কিছু জমিতে সমলয়ে বোরো ধান চাষ করা হয়। এতে দেখা যায় সমলয়ে চাষাবাদ করার কারণে প্রতি একর জমিতে কৃষকের ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে, বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী।
তিনি জানান, জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধান ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ বোরো ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় সম্ভব।
উপপরিচালক বলেন, সফলভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে ফেনী সদর উপজেলার ৫০ একর জমিতে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় কৃষক বোরো বীজ সার ও ফসলের উপকরণ পাবে। প্রদর্শনীতে আবাদ ও উৎপাদনে সাফল্য পেলে এই অঞ্চলে বোরো আবাদে কৃষকের আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে, আশা করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন খান জানান, প্লাস্টিকের ফ্রেমের মধ্যে ৩:২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে দিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজতলা তৈরির ৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব।
আলোকদিয়া ব্লকের উপ সহকারী কৃষি অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, পানির সেচ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে বিগত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে ভালুকিয়ায় প্রায় একশ একর জমি অনাবাদি পরে থাকে। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে ৩০ একরসহ মোট ৫০ একর জমিতে চাষাবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা গেলে কালিদহ ইউনিয়নে খাদ্য উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও দেশের খাদ্য যোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মমিন নামে এক কৃষক বলেন, পানি সেচের অভাবে সব জমিতে বোরো আবাদ করা যায় না। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সমলয়ে চাষাবাদ নামে নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। আমাদের কাছে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন। তারা বলছে, বেডের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রাইস ট্রান্সপারেন্ট মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ করা হবে।
এ বিষয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কৃষিতে শ্রমিকরা এখন মৌসুমি। মৌসুম শেষে তার অন্যান্য কাজে নেমে পড়ে। অনেকে পরবর্তী মৌসুমে কৃষি কাজে পুনরায় আসেন না। ফলে ফসল ঘরে তোলার সময় শ্রমিক সংকট এখন নিত্ত নৈমিত্তিক। অথচ ক্রম বর্ধমান মানুষের খাদ্যের উৎপাদন ত্বরান্তিত করার বিকল্প নেই। তাই কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ সময়োপযোগী ও যথাযথ সিদ্ধান্ত। আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে শ্রমিক সংকট নিরসন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২১
এসএইচডি/এইচএডি