ঢাকা: উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ধারা মসৃণ অব্যাহত রাখতে শ্রম আইন ও অধিকার বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ বর্তমান। মসৃণ এই উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শ্রমমান পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর ইবিএ এবং জিএসপি’-এর সম্ভাবনা: শ্রম আইন ও অধিকার সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব বিষয় উঠে আসে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তম রফতানি বাজার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত হতে পারলে উত্তরণ-পরবর্তীকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানির ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক দেয়া থেকে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ৭০০টি মানবাধিকার ও শ্রমমান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক রীতি মেনে চলতে হবে। যার মধ্যে ১৫টি আইএলওর শ্রমমানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিগত প্রায় আট বছর সময় ধরে শোভন কাজ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরোও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে হয়রানি সম্পর্কিত বিষয়গুলো কে আইনী কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা; বাধ্যতামূলক শ্রম ইস্যু সঠিকভাবে মোকাবিলা; আইএলও বিশেষজ্ঞ কমিটির উদ্বেগের দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং সার্বিক তদারকি ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার দাবিও তোলা হয়।
সংলাপে সূচনা বক্তব্যে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পেতে প্রাসঙ্গিক মানদণ্ডগুলোর পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনগত ত্রুটিগুলো পর্যালোচনা এবং শ্রমের মান সম্পর্কিত জিএসপি এর সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ বিষয়ে যৌথভাবে সিপিডি ও নেটওয়ার্কস ম্যাটার এই গবেষণা পরিচালনা করেছে।
মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনায় সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা একটি বাণিজ্য কাঠামো প্রদান করে, যা পেতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রচারের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর জিএসপি সুবিধা পেতে শ্রম আইন নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন যে শিশু শ্রম, ট্রেড ইউনিয়ন আইন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসহ শ্রম আইন ও অধিকারের সংস্কারের উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সম্মানিত অতিথি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক বলেন, বাংলাদেশকে শ্রমিকবান্ধব একটি দেশ হিসেবে পরিচিত করার প্রয়োজন রয়েছে যা শুধু জিএসপি সুবিধা পেতে নয় বরং শ্রমিকদের সামগ্রিক উন্নয়নে সাহায্য করবে।
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পটিয়াইনন প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর বিশেষ জোর দেন এবং শ্রম আইন ও অধিকার বিষয়ে সংলাপ চলমান রাখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলোকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার দরকার আছে বলে তিনি মনে করেন এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে শ্রম আইন ও অধিকার নিশ্চিতের গুরুত্ব তিনি আবার তুলে ধরেন।
এছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) কামরান টি রহমান, শ্রম অধিদপ্তরের বেল্লাল হোসেন শেখ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দীপু। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অনেকে অংশ নেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এসই/এনটি