ফেনী: চলতি মৌসুমে ফেনী ও নোয়াখালীতে বিগত বছরগুলোর চেয়ে কয়েকশ গুণ আবাদ বেড়েছে সূর্যমুখীর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত নোয়াখালীর ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে।
অপরদিকে চলতি মৌসুমে ফেনীতে আবাদ হয়েছে ২৩৯ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিলো মাত্র ২৯ হেক্টর জমিতে। এ বছর এ জেলায় আবাদ বেড়েছে প্রায় ৮শ গুণ। অল্প পুঁজি, পরিশ্রম আর কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় এ দুই জেলার কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষে। উৎপাদিত তৈল বীজ ভাঙ্গিয়ে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল।
নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার আইয়ুব মাহমুদ বলেন, নোয়াখালীর চাষিদের সূর্যমিখী আবাদেও ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি ভালো ভূমিকা রাখছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৪ হাজার মানুষকে ১ বিঘা করে জমিতে চাষাবাদের জন্য সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টেকনিক্যাল সহযোগিতা তো আছেই।
নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অশিত রঞ্জন মজুমদার বলেন, গত বছর নোয়াখালীতে সূর্যমুখী তৈল বীজ উৎপাদন হয়েছিলো ৩৫২ মেট্রিক টন। এবার তা ১ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলার সুবর্ণচরে সূর্যমুখীর আবাদ সব চাইতে বেশি হয়। এ বছর সেখানে আবাদ হয়েছে ১৩৫ হেক্টর জমিতে, পাশের উপজেলা হাতিয়াতে হয়েছে ৪২ হেক্টর জমিতে। অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও কমবেশি চাষাবাদ হচ্ছে।
স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা দ্বীপ উন্নয়ন ও সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদরা বলছেন, এ এলাকার লবণাক্ত অনাবাদী জমিতে স্বল্প খরচে বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এর কারণে লবণ সহিষ্ণু এ ভোজ্য ফসল আবাদে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এতে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমবে ও পূরণ হবে স্বাস্থ্যকর সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।
কবির হোসেন নামে সূবর্ণচরের এক কৃষক বলেন, এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয় আর আয় হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ফসল উঠতে সময় লাগে মাত্র তিনমাস। বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে মাঠে ফসল রোপণ করার পর এপ্রিল-মে ফসল মাঠে উঠে।
পতিত আনাবাদী জমিতে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করে গ্লোব কৃষি খামার। পরে ভালো ফলন ও লাভের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে।
কথা হয় গ্লোব কৃষি খামারের সঙ্গে, তারা বলেন, এ মৌসমে তারা তাদের নিজস্ব শতাধিক একর জমিতে চাষাবাদ করেছে সূর্যমুখীর। কৃষকদের বীজ সরবরাহ করেছে তারা। কৃষকের উৎপাদিত সুর্যমুখী বীজ তারা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে ঢাকার রূপগঞ্জে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তেল উৎপাদন করছে।
এদিকে ভালো দাম পাওয়ায় ফেনীতেও দিন দিন বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ১ হাজার কৃষককে ১৩৪ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৪০ জন কৃষককে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৪৫ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। গেলো মৌসুমে কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছেন বলে এবারও সূর্যমুখী আবাদে তারা আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান এই কৃষিবিদ।
তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়লে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে দেশীয় উৎপাদিত তেলের ব্যবহার আরও বাড়বে। এ তেল মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী। এবং এটি সব শ্রেণির মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর।
কৃষকরা বলছেন, দিনদিন সূর্যমূখীর আবাদ বাড়লেও এ লাভজনক ফসলটি চাষাবাদ তারা একটি সমস্যায় পড়ছেন তা হলো। তা হলো বীজের অংকুরোদগম। কিছু সময় বীজ অংকুরোদগমে সমস্যা করে।
তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, বীজের মান নিয়ে কৃষকদের অভিযোগের ব্যাপারে জেনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। যদি এমনটা হয়ে থাকে ধারণা করছি কিছু বীজের মান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। এটি বড় ধরনের সমস্যা নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
এসএইচডি/এএটি