ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

১৪ ব্যাংকে ঋণের সুদহার ৭ শতাংশের কম

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১
১৪ ব্যাংকে ঋণের সুদহার ৭ শতাংশের কম

ঢাকা: দেশের শিল্পখাতকে সম্প্রসারণ করার জন্য গেল বছরের ১ এপ্রিল ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে ঋণ বিতরণ।

 

গেল বছরের ডিসেম্বর থেকে ১৪টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার গড়ে ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, সুদের হার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করার আগে মাত্র ৬টি ব্যাংকের গড় ঋণের সুদহার ৭ শতাংশের নিচে ছিল।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে ওই বছরের ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।  

অপর দিকে ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের বাজার থেকে মার্কিন ডলার ক্রয় করার ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত নগদ টাকা সরবরাহ রয়েছে।  

তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নও ব্যাংকগুলোতে বিশাল তারল্য প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এমনকি অধিক পরিমাণে তারল্য থাকলেও ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছরের নভেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।  

উদাহরণ হিসেবে দেখা গেছে, বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের ডিসেম্বরে গড় ঋণ বিতরণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশে। এক বছর আগেও গড় ঋণ বিতরণ ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এভাবে ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম কামাল হোসেন বলেন, এর প্রধান কারণ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া।

ঋনের সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়নের আগে সাউথইস্ট ব্যাংক ১৩-১৪ শতাংশ সুদে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করতো। তখন ঋণের গড় সুদহার ছিল ১০ শতাংশের মতো। ঋণের সুদহার পরে গড়ে ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের (জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক) ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ শতাংশের নিচে।  

ব্যাংকাররা বলছেন, খেলাপী ঋণের ওপর সুদ আরোপ না করার কারণেও ঋনের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে।

সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে।

ঋণের সুদহার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক করোনা ভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য সরবরাহ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) আরো ১ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে নীতি সুদহার রেপো রেট করা হয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

মহামারি করোনা ভাইরাসের আগে মার্চ মাসে ব্যাংক রেট ছিল ৬ শতাংশ।

ঋণের সুদহার কমার সঙ্গে সঙ্গে গেল বছরের মে মাসে সামগ্রিক ব্যাংকিংখাতে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশে। ২০২০ সালের মার্চ মাসেও ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ছিল ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। গেল বছরের ডিসেম্বর শেষে স্প্রেড বেড়েছে ৩ দশমিক ০২ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
এসই/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।