ঢাকা: কোভিড-১৯ বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় (ই-জিপি) কভারেজ বাড়াতে বাংলাদেশকে চার কোটি ডলার বাড়তি সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) আওতায় বাস্তবায়নাধীন সিপিটিইউর ডিজিটাইজিং ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্টের (ডিআইএমএপিপিপি) আওতায় এমন উদ্যোগ। এই অর্থায়ন জরুরি ক্রয় প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে এবং টেকসই ক্রয়ের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের এবং নারী নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। ‘ক্রয়ের আইন ও বিধির সঠিক প্রতিপালন এবং তা দক্ষতার সঙ্গে সময়মতো করতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সেজন্য ক্রেতা ও দরদাতার মধ্যে একটি পারস্পরিক আস্থা ও বিধির আলোকে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা জরুরি বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। ক্রয়চুক্তির সুষ্ঠু ও মানসম্মত বাস্তবায়নে এই দুই পক্ষের সমান দায়িত্ব রয়েছে।
গত ১০ বছরে আমরা সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাইজেশন যাকে ই-জিপি বলা হয়। ই-জিপির ফলে সরকারি ক্রয়ে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বেড়েছে।
জিটিএফ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি দরদাতা ও ক্রয়কারীর একটি দ্বিপাক্ষিক প্লাটফর্ম। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- স্থানীয় পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পেশাদার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং একটি টেকসই ক্রয় পরিবেশ তৈরি করা। দেশের ৬৪ জেলায় গভর্নমেন্ট-টেন্ডারার ফোরামের (জিটিএফ) কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
বিশ্বব্যাংকের এই অতিরিক্ত অর্থায়ন সকল পাবলিক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে ই-জিপি সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। মহামারি এবং অন্যান্য ভবিষ্যৎ জরুরি অবস্থার মধ্যেও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ই-জিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক নিলাম, সরাসরি চুক্তি, কাঠামো চুক্তি, ইলেকট্রনিক চুক্তি ব্যবস্থাপনা এবং অর্থপ্রদান, ক্রয় ডাটা অ্যানালিটিক্স, জিও-ট্যাগিং, এবং অন্যান্য।
বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও সাধারণ ছুটির দিনেও ই-জিপি সারা দেশে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ই-জিপির মাধ্যমে কোন মহামারিতে উন্নয়ন কাজ থেমে থাকবে না। এর মাধ্যমে শতভাগ অর্থ ব্যবহার নিশ্চিত এবং দেশে সময়োপযোগী এবং গুণগত মানের সরকারি কাজ এবং পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি নিশ্চিত করবে। ’
২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক সরকারি ক্রয় উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করে আসছে। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সরকার চারটি ক্রয় প্রতিষ্ঠানে ই-জিপি চালু করে। ২০২০ সালে দেশে সরকারি ক্রয় ব্যয়ের প্রায় ৬২ শতাংশ ইজিপিতে সম্পন্ন হয়। যার ক্রয় চুক্তির পরিমাণ ১৭ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ই-জিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। মহামারির সময়, ই-জিপি ১৩শ’র বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে অনলাইনে সকল ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়া করতে সহায়তা করে। এই প্রকল্প নাগরিকদের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেছে যাতে তারা সহজেই সরকারি ক্রয় সম্পর্কে তথ্য ট্র্যাক করতে পারে এবং মতামত দিতে পারেন। ৪৮টি উপজেলার মানুষ ইতোমধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করছে, যা নতুন অর্থায়নের আওতায় আনা হবে।
এই অতিরিক্ত অর্থায়ন ই-জিপি ডাটা সেন্টারের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং পেমেন্ট মডিউল দেশব্যাপী চালু করা নিশ্চিত করবে।
বিশ্বব্যাংকের টিম লিডার ইশতিয়াক সিদ্দিক বলেন, সরকারি ক্রয়ের ডিজিটালাইজেশন ছিল সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্য একটি গেম চেঞ্জার। এটি দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে সাহায্য করেছে এবং ব্যবসা করা সহজ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১
এমআইএস/কেএআর