ফেনী: বেড়ে চলেছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম, যার প্রভাব পড়ছে উন্নয়ন কাজে। ঠিকাদাররা বলছেন, এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
সড়ক বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও গণপূর্তের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। তবে সরকারি বিভিন্ন প্রকৌশল দফতর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজে ধীরগতির পেছনে রয়েছে করোনাসহ একাধিক কারণ।
রাগাদ কনস্ট্রাকশন নামের একটি নির্মাণ সামগ্রী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, মাত্র দুইমাসে বালুর দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। রডের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ, ইট প্রতি দাম বেড়েছে তিন টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে ধীরগতি।
তিনি বলেন, নোয়াখালীর চার লেন সড়কে বরাদ্দ ছাড় পেয়েছি ৪৫ কোটি টাকা। যা কাজের অগ্রগতির তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একইভাবে মুহুরী সেতু এবং ফাজিলের ঘাট সেতুর ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প হলেও এ পর্যন্ত বরাদ্দ এসেছে ১০ কোটি টাকা।
তিন প্রকল্পই চলতি বছরের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি ও অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে যথাসময়ে শেষ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নিজের ব্যবসায়িক ক্ষতি প্রসঙ্গে মোশারফ বলেন, প্রকল্পগুলো পুনঃমূল্যায়ন না হলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বো।
বরাদ্দের অপ্রতুলতা প্রসঙ্গে একইরকম তথ্য দেন সোহেল কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হক সোহেল। তিনি জানান, তিন কোটি ছাব্বিশ লাখ টাকার দাগনভূঞার দরবেশের হাট ফাজিল মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ কাজ পঁচানব্বই শতাংশ শেষ হলেও অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে মাত্র পঁয়ত্রিশ শতাংশ।
অর্থছাড় প্রসঙ্গে ঠিকাদারদের বক্তব্যকে সমর্থন করেননি ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।
নির্মাণ সামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পণ্যের মূল্যমান পূর্বেই নির্ধারিত, পুনঃমুল্যায়নের সুযোগ নেই।
করোনায় বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা ছাড় পর্যাপ্ত হয়নি বলে জানান ফেনী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব। তিনি জানান, ফেনীতে ১১৩ কোটির টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। দুই থেকে তিন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কম এসেছে। করোনার কারণে এমনটা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে ফেনীতে ৫৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী জানান, একশ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। সংস্কার কাজের ফান্ড পর্যাপ্ত হলেও সড়ক নির্মাণ কাজে বরাদ্দ অপ্রতুল রয়েছে।
বালুর দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ফরহাদনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বালি ইজারাদার মোশারফ হোসেন টিপু জানান, প্রশাসনের নিয়মনীতি ও বালি আহরণে জটিলতায় পূর্বের তুলনায় কম বালি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ছে, দুই মাস পূর্বে প্রতি ফুট বালু ৮ টাকা ছিল। এখন বালুর দাম ২২ টাকা।
ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইজারাদার মজিবুল হক রিপন জানান, চর থেকে বালু পাওয়া যায়। চর কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বালির সংকট রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এসএ শাখার তথ্য অনুযায়ী ছয় ইজারাদার হলেও ছোট বড় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে অনেক স্থানে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বালু চুরি রোধ করতে কঠোর অবস্থান নেয় ফেনী জেলা প্রশাসন।
রডের দাম নভেম্বরের শেষে টন প্রতি ৫২ হাজার টাকা ছিল। এখন তা ৬৬ হাজার টাকা, জানান দাউদপুরে ইস্টার্ণ ট্রেডিংয়ের মালিক ফটিক। একইসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে সিমেন্টের দাম। তবে রড ভেদে এ দামে তারতম্য রয়েছে এবং দাম সহনশীল পর্যায়ে সহসা ফিরতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
এসএইচডি/এইচএডি