ঢাকা: বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড়ের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পের আওতায় মোট বরাদ্দ ২৬২ কোটি টাকা।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পরিকল্পনা কমিশন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
টাকা ছাড়ের আবেদন করে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জানান, চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ২৬২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম ও তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। ছাড়কৃত অর্থ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাত থেকে ৯৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এখন ৪৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা জমা আছে। ফলে ২০২১ সালের জানুয়ারির বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিধায় চতুর্থ কিস্তি বাবদ টাকা ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবকৃত অর্থছাড় করা হলে সম্পূর্ণ অর্থ পূর্ত কাজের বিল পরিশোধে ব্যয় করা হবে।
বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের দীর্ঘতম সৌন্দর্যমণ্ডিত ও দেশের দ্বিতীয় এক্সট্রাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার পায়রা (লেবুখালী) সেতু ২০২১ সালের জুনে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে পূর্ত কাজে এই অর্থ ব্যয় হবে। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এরইমধ্যে সেতুর ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্মাণাধীন পায়রা সেতুতে পদ্মাসেতু থেকেও ৫০ মিটার বড় দুইটি স্প্যান বসানো হবে। নান্দনিক এক্সট্রাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার ব্রিজটিতে নদীর মধ্যে মূল ব্রিজ হবে ৬৩০ মিটার। এজন্য ২০০ মিটারের দুটি স্প্যান ও দু’পাশে দুটি স্প্যান ১১৫ মিটার করে হবে। যা দেশের সবচেয়ে বড় সেতু পদ্মাসেতু ব্রিজের স্প্যানের থেকেও বড়।
চারলেন বিশিষ্ট এক হাজার ৪৭০ মিটার (চার হাজার ৮২০ ফুট) দৈর্ঘ্যের ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার (৬৪ দশমিক ৮ ফুট) প্রস্থের এক্সট্রা বক্স গার্ডার ব্রিজটির উভয় দিকে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হবে অ্যাপ্রোচ সড়ক। ব্রিজটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা।
এছাড়া সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু হবে। ফলে নদীতে নৌ-যান চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হবে সেতুটি।
বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর ‘লেবুখালী সেতু’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দার উম্মুক্ত হচ্ছে সর্বদক্ষিণের।
এ সেতুকে ঘিরে পরিকল্পনায় ব্যস্ত রয়েছেন ছোট-বড় নানা ধরনের ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল, তেল পাম্পসহ এমনকি জমির মালিকরাও।
কুয়েত সরকারের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চায়নার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান চাইনিজ কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সেতুটির কাজ। এ কাজ সম্পন্ন হলে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
পটুয়াখালী-বরিশাল চলাচলকারী গণপরিবহনের চালক নিজাম বলেন, সেতুটি চালু হলে আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না। পদ্মাসেতুও প্রায় হয়ে গেছে। এরপর আমরা দিনে দু’বার আসা-যাওয়া করতে পারবো। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পটুয়াখালী পৌঁছানো যাবে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক গুণ সহজ হবে।
২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন লাভ করে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
এমআইএস/এএটি