ঢাকা: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশ অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ২০২১-২৩ মেয়াদে সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।
জসিম উদ্দিন বর্তমানে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
চলতি বছরের ৫ মে ভোট গ্রহণ ও ৭ মে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সভাপতি পদে নির্বাচন হবে।
সভাপতি নির্বাচিত হলে জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের জন্য যা করতে চান, তা জানিয়েছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকে।
জসিম উদ্দিন বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। অনেক ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমিও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ছিলাম। সুতরাং আমি জানি ছোট ব্যবসায়ীদের দুঃখ দুর্দশা। এফবিসিসিআইয়ের মত সংগঠন সবার জন্য দরকার। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের। বড়দের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারে না। এফবিসিসিআই তাদের জন্য বেশি দরকার।
তিনি বলেন, এফবিসিসিআইকে গবেষণাভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন হতে হবে। ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে এটা অংশগ্রহণমূলক কাজের প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। যারা নির্বাচন করেন, যেসব সেক্টরের প্রতিনিধিত্ব করেন, প্রকৃত ব্যবসায়ী, তাদের সংগঠনই হওয়া উচিত এফবিসিসিআই।
জসিম উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নিতে পারলে সারাদেশের সবগুলো চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চাই। ব্যাংক এখনও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের টাকা দিতে পারে না। ব্যাংকগুলো মনে করে ছোট ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ। টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন ছোট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে, কো-অপারেট করা গেলে সবাই উপকৃত হবে। আমি ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর জন্যেই কাজ করতে চাই।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ভূমিকায় মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। তবে রপ্তানি এখনো আগের অবস্থায় ফেরেনি। কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। আমাদের পণ্য যেসব দেশে বিক্রি হয়। সেসব দেশে এখনো করোনার ভয়াবহ অবস্থা। বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজার। স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ নয় ভালো। কিছুটা স্লো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক ভালো। রপ্তানি পণ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছেন, সেটা খুবই কার্যকর হয়েছে। যার ফলে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়নি। আমরা যেভাবে চিন্তা করেছিলাম। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হবে, অনেক কারখানা বন্ধ হবে। সেটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কারখানাগুলো স্ট্রাগল করছে। কারণ অর্ডার কমে গেছে। শিপমেন্ট কমে গেছে। পেমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতারা এককালীন পেমেন্ট করতে পারছেন না। কারণ তাদের শোরুমগুলো বন্ধ। অনেক জায়গায় এখনো লকডাউন চলছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন হচ্ছে। ২০২৭ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন আছে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সরকার এবং বেসরকারিখাতকে একত্রে কাজ করতে হবে। এজন্য আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনের বিজনেস উইংগুলোকে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট, এফটিএ নিয়ে কাজ করতে হবে। চলতি বছর ভিয়েতনাম ইউরোপের এফটিএ সুবিধা পেলে তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, তখন কিন্তু আমাদের প্রতিযোগী থাকছে না। রাশিয়া, তুরস্কের মতো জায়গাও এফটিএ নিয়ে কাজ করা দরকার।
জসিম উদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করা দরকার। সরকার নীতি নির্ধারণে অনেক সময় বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে না। বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার কাজটাই এফবিসিসিআই করবে।
যেমন, অনেকগুলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেখানে কাস্টম, পরিবেশের কী হবে, সেটা এখনো চিহ্নিত হয় নাই। এসব পলিসি ঠিকমত করা না গেলে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি যেটা শুনেছি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে হলে বিদেশ থেকে আনা পণ্যের সমান ট্যাক্স দিতে হবে। যদি সেটা করা হয়, তাহলে স্পেশাল ইকোনোমি জোনে কেউ যাবে না। এনবিআর, পরিবেশ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এসব বিষয়ে এফবিসিসিআইর সমঝোতা করা দরকার।
বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। সরকারের যেসব মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে সম্ভব। অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই শিল্পায়ন হবে। দেশ শিল্পায়নের দিকে আগাচ্ছে। সেবাখাত আমাদের দেশ অনেক দুর্বল। সেখানে গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। সেবাখাতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। একটি দেশ যখন মধ্যম আয়ের হয়, তখন সেবাখাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারের পরিকল্পনাগুলো অর্জন করা গেলে দেশের উন্নয়ন হবে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যও বাড়বে। এফবিসিসিআইয়ের কাজ হওয়া উচিত সরকারের পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত এবং বাস্তবায়ন করা। আমি মনে করি, তাহলেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসা করতে গেলে লাভ-লোকসান হতেই পারে। বাংলাদেশে ব্যবসার সিস্টেম হচ্ছে একমুখী। কেউ ব্যবসায় ঢুকে গেলে আর বের হওয়ার সুযোগ নাই। বিদেশে বের হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের খেলাপিরা চিহ্নিত। এদেরকে আমরা সবাই চিনি ও জানি। ব্যাংকগুলোর সমস্যা হচ্ছে সব সময় তারা করপোরেটদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। মানে সহজ ব্যবসা চায়। ব্যাংক একজনকে ৫০-১০০ কোটি দেয়। সেখান থেকে প্রফিট এলো ব্যাংক চললো।
তিনি আরও বলেন, এখন যারা প্রকৃত বড় ব্যবসায়ী তারা স্থানীয় ঋণ নিচ্ছে না। তারা কম সুদে বিদেশ থেকে টাকা আনছে। যারা টাকা নিয়ে দিতে পারে না, তারাই নিতে চাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর উচিত এখন এসএমই খাত ও গ্রামে চলে যাওয়া। এনজিওগুলোর দিকে যদি তাকান উচ্চ সুদ নিয়েও তারা মুনাফা করছে। তাদের কোনো খেলাপি নেই। তারা কিভাবে ২০-২২ শতাংশ সুদ নিয়ে সারভাইব করছে। গ্রামে যাওয়া সহজ। কারণ গ্রামের ইউনিয়নেও ইন্টারনেট সংযোগ আছে। উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং করতে পারেন। এগুলো না করলেও আরও সমস্যা হবে। নতুন ব্যাংক এসে কাকে টাকা দেবে? তাদের উচিত হবে এগুলোতে কাজ করা। আমি মনে করি, ব্যাংকগুলো চাইলে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২১
এসই/এজে