বাগেরহাট: মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে দেশের বৃহত্তম চিংড়ি পোনার বাজার বাগেরহাটের ফয়লাহাট। কাক ডাকা ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত পোনা কেনার জন্য ভিড় করছেন চিংড়ি চাষিরা।
কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হ্যাচারি থেকে আসা পোনা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ঘেরে পোনা ছাড়ার ভর মৌসুম শুরু হবে আরও এক মাস পরে, এরই মধ্যে প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার বেশি পোনা বিক্রি হচ্ছে এই হাটে। আরও প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাসে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার পোনা বিক্রি হবে এই হাটে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিংহভাগ চিংড়ি চাষি এ হাটের পোনার উপর নির্ভর করেন। তবে সম্ভাবনাময় এই হাটের নানা সংকটের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
খুলনা-মোংলা মহাসড়কের বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ফয়লা নামক স্থানে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম এই চিংড়ি পোনার হাট। এই হাটে দুই শতাধিক পোনার আড়ত (দোকান) রয়েছে। পোনা গণনা, পরিবহনসহ নানা কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আরও সহস্রাধিক মানুষ। যাতায়েত ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় প্রতিদিন ভোর থেকে বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চিংড়ি চাষিরা ছুটে আসেন এই চিংড়ি পোনার আড়তে। এখান থেকে পোনা কিনে নিয়ে চলে যান মৎস্য ঘেরে।
হ্যাচারির পোনার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণকৃত পোনাও বিক্রি হয় এই হাটে। তবে হ্যাচারির চেয়ে গুণগত মান ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় নদী থেকে পাওয়া পোনার চাহিদা বেশি। তাই দামও দ্বিগুণ। প্রতি হাজার হ্যাচারি পোনা বিক্রি হয় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। আর নদীর পোনা বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত।
চিংড়ি পোনা গণনা ও পরিবহনের জন্য রয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। দিনে ৫০০ থেকে হাজার টাকা টাকা পর্যন্ত আয় করেন তারা। তবে হাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখার জন্য হাটের অবকাঠামোর উন্নয়নসহ প্রশাসনের হয়রানি বন্ধের দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাকৃতিক উৎসের মাধ্যমে আহরিত পোনা গাড়িতে করে আসে এই হাটে। হাট থেকে পোনা কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক চাহিদা না মেটানোর কারণে এই পোনা ঢেলে ফেলে দেন তারা। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। অনেক সময় নদীর পোনার ব্যবসায়ীদের হাড়িও ফেলে দেন ঠুনকো অজুহাতে।
ব্যবসায়ী মো. তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ফয়লাহাট বাজারটি এমন একটা জায়গায় অবস্থিত যে বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে মানুষ সহজে আসতে পারেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে গোবিন্দপুরের পথে ফয়লাহাটে প্রবেশের ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। যার ফলে বাইপাস সড়ক দিয়ে আসতে ক্রেতাদের খুব কষ্ট হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষসহ বাজারের নানা অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান তিনি।
পোনা ব্যবসায়ী শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, বাগেরহাটের নয়টি উপজেলা, ৭৫টি ইউনিয়নসহ সকল গ্রাম থেকে এখানে পোনা কিনতে আসেন চাষিরা। জেলার বাইরে সাতক্ষীরা, পাইকগাছা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি চাষিরা এখান থেকে পোনা কিনে ঘেরে ছাড়েন।
পোনা কিনতে করতে আসা ঘের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের আগ্রহ থাকে নদীর পোনার উপর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নদীর পোনার সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে হ্যাচারির পোনা কিনতে হয়। তবে নদীর পোনার উৎপাদন ভাল হয় বলে দাবি করেন তিনি।
কচুয়ার চিংড়ি চাষি শেখ রুস্তম আলী বলেন, ১৭ বছর ধরে এই হাট থেকে পোনা কিনে ঘেরে ছাড়ি। পোনার দাম ও মান দুটোই আমাদের পছন্দের মধ্যে থাকে। তবে অনেক সময় দুই তিন দিন আগের হ্যাচারির পোনা আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। ওই পোনাগুলো পরবর্তীতে ভাল ফল দেয় না। এই বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানান তিনি।
ফয়লাহাট বাজার মৎস্য সমিতির সভাপতি গাজী রাশেদুল ইসলাম ডালিম বাংলানিউজকে বলেন, ফয়লাহাটে পোনা পরিবহন, পোনা গোনাসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সহস্রাধিক মানুষ যুক্ত রয়েছেন। এই হাট থেকে প্রতিবছর সাড়ে তিনশ কোটির উপরে পোনা বিক্রি হয়। কিন্তু অনেক সময় প্রশাসনের লোকজন হাটের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রানি করে যা মোটেই কাম্য নয়। হয়রানি বন্ধে মৎস্য বিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাটের সব থেকে বড় পোনার হাট ফয়লাহাট। এখানের পোনার উপর চাষিরা এক ধরণের নির্ভর করেন। কোনো ভাবে এই হাট ও হাটের উপর নির্ভর করা চাষিদের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠ সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
কেএআর