সিলেট: দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনী জট সহসাই মিটছে না। প্রেসিডিয়াম গঠন ইস্যুতে চেম্বারের নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে পরিচালক নির্বাচিত প্রার্থীরা।
গত শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সিলেট চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সমান ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। কোনো প্যানেলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
এ নিয়ে সোমবার বিকেল ৩টায় প্রেসিডিয়াম গঠনের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পর সাংবিধানিকভাবে একই শ্রেণি অর্ডিনারি থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল হলে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদকে সভাপতি ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে মো. আতিক হোসেনের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নাম ঘোষণার পর তুলকালাম চলে চেম্বার ভবনের সামনে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) নগরের একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রেসিডিয়াম কমিটি গঠন এবং প্রতিকার পেতে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষুব্ধরা বলেন, চেম্বারের যে প্রেসিডিয়াম গঠন করা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে আপিল করা হবে। আপিলে বিষয়টির সুরাহা না হলে তারা আদালতে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত পরিচালক আব্দুর রহমান জামিল বলেন, সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছিল। নির্বাচন পরবর্তী প্রক্রিয়া প্রেসিডিয়াম নির্বাচন। প্রেসিডিয়াম নির্বাচনে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্যে যে কেউ প্রেসিডিয়াম পদে পৃথকভাবে প্রার্থী হতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় ওই নির্বাচনে বিভিন্ন গ্রুপ সভাপতি পদে ২ জন, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ২ জন ও সহ-সভাপতি পদে ২ জন করে মোট ৬ জন সদস্য পৃথকভাবে মনোনয়নপত্র ক্রয় করে দাখিল করেন।
নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড প্রেসিডিয়াম গঠনের লক্ষ্যে ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় সভা আহ্বান করে। সভাতে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল জানান, ৩টি পদে ৬ জন ব্যতীত আরও অনেক প্রার্থী সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়ে তা প্রত্যাহার করে নেন।
এ সময় নবনির্বাচিত পরিচালক ও প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী জিয়াউল হক নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, কারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এই পর্যায়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ আছে কিনা, ব্যাখ্যা চান।
কিন্তু ইসি চেয়ারম্যান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তৎপরবর্তী সময়ে ইসি চেয়ারম্যান সভাপতি পদে তাহমিন আহমদ, আব্দুর রহমান জামিল, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে জিয়াউল হক, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সহ-সভাপতি পদে হুমায়ন আহমদ ও মো. আতিক হোসেনের নাম একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন।
এরপর উপস্থিত পরিচালকরা গোপন ব্যালটে সরাসরি মতামতে বা হাত উত্তোলনের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম গঠন করবেন। ইতোমধ্যে তাহমিন আহমদ একটি লিখিত আপত্তি নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডে দেন। আপত্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেননি তিনি। তারপর ইসি চেয়ারম্যান সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় হঠাৎ করে রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া মুলতবি ঘোষণা করেন।
পরে মুলতবি সভা শুরু করামাত্রই প্রেসিডিয়াম নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়নি বলেও দাবি করেন তারা। সময়ক্ষেপণ করে রাত ১০টার দিকে সংঘবিধির অজুহাতে সভাপতি পদে আব্দুর রহমান জামিল ও হুমায়ন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে আগেই রায় লিখে রাখা হয় এবং এটা সম্পূর্ণ বেআইনি দাবি করেন আব্দুর রহমান জামিল।
ইসি চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপ প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে কীভাবে প্রেসিডিয়াম গঠন হলো, তা কারো পক্ষে বোঝার সুযোগ নেই। অথচ নির্বাচন বোর্ড কীসের ভিত্তিতে ২টি মনোনয়ন বাতিল করলেন, তা বোধগাম্য নয়। নির্বাচন কমিশনের এমন অযৌক্তিক অন্যায় এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একতরফা মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত সিলেটের সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজকে মর্মাহত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত পরিচালক হুমায়ন আহমদ, জিয়াউলি হক, সারোয়ার হোসেন ছেদু, জহিরুল কবীর চৌধুরী, দেবাংশু দাস মিটু, আব্দুস সামাদ, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, খন্দকার ইশরার আহমদ রকি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
এনইউ/এমজেএফ