ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজুস সভাপতির দায়িত্বে সায়েম সোবহান আনভীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
বাজুস সভাপতির দায়িত্বে সায়েম সোবহান আনভীর

ঢাকা: দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারিখাতে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপনকারী এবং সর্ববৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড ও আরিশা জুয়েলার্স লিমিটেডের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপ্ন দেখছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ উৎপাদিত সোনার গহনা অচিরেই বিশ্ববাজারে রপ্তানি হবে।

দেশের খ্যাতনামা উদ্যোমী শিল্পদ্যোক্তা সায়েম সোবহান আনভীর তার নেতৃত্বাধীন পুরো প্যানেলকে চূড়ান্তভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করায় সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বাজুস আয়োজিত দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে সংগঠনটির নতুন ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২১-২০২৩ মেয়াদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।  

বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বাধীন নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি সংগঠনটির বিদায়ী সভাপতি এনামুল হক খান দোলনের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাজুসের পুনর্নির্বাচিত সহসভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন।  

ছবি: জিএম মুজিবুর


অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজুসের নতুন সভাপতি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম একটি গ্রুপ। বাংলাদেশের শিল্পায়নে, অর্থনীতিতে, কমংসংস্থানে সায়েম সোবহানের পিতা আহমেদ আকবর সোবহানের অনেক অনেক অবদান রয়েছে। তারই সুযোগ্য পুত্র সায়েম সোবহান আনভীর জুয়েলারি খাতে দ্বিতীয় প্রজন্ম হিসেবে এসেছেন। আপনারা জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা সৌভাগ্যবান যে সায়েম সোবহান আনভীরকে সভাপতি হিসেবে পেয়েছেন। এতে জুয়েলারি খাতের অনেক বড় সুবিধা হলো।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সায়েম সোবহান ও তার পিতা আহমেদ আকবর সোবহান এই দেশে অনেক বড় বড় শিল্পায়ন করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- আহমেদ আকবর সোবহান কখনো ছোট কিছু চিন্তা করেন না। সবসময় চেষ্টা করেন বড় কিছু করার জন্য। বসুন্ধরা হাউজিং থেকে শুরু করে প্রত্যেকটাই বড় করে নিয়ে এসেছেন। বসুন্ধরা যখন মিডিয়াতে এসেছে, সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউজটি তাদের। যখন টিভিতে এসেছেন দুইটা চ্যানেল তাদের। স্পোর্টসে এসেছে, অনেকগুলো ক্লাবের সঙ্গে কাজ করছে। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য গর্বিত। কারণ দেশে এই ধরনের গ্রুপ দরকার।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা এখন বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। অনেক মহাঘটনার সাল ২০২১। এই ২০২১ সালেই বাজুসের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন সায়েম সোবহান আনভীর। এখন দেশে মাথাপিছু ২ হাজার ৫৯৪ ডলার আয়ে আমাদের যে অবস্থা, খরচ, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা সেটা, সাড়ে ৫ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় হলে আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা ও বাজার অনেক বড় হয়ে যাবে। ২০৪১ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় সাড়ে ১২ হাজার ডলার হলে জুয়েলারি মার্কেটও বড় হবে। মানুষের আয় যখন বেশি হবে তখন খরচও বেশি হবে। এখন সার্মথ্য অনুযায়ী স্বর্ণের চেয়ে ডায়মন্ড বেশি ব্যবহার করছেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভবিষ্যতে জুয়েলারির বিশাল বড় মার্কেট হতে পারে। আমি মনে করি প্রটেনশিয়াল সেক্টরে সরকার নীতি সহায়তা ও ইনসেনটিভ দিলে তারা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। জুয়েলারি পণ্যের বড় রপ্তানিকারক হতে পারে বাংলাদেশ। দেশের মার্কেট ছাড়াও আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো যদি এই শিল্পকে সহায়তা দিতে পারি। জুয়েলারি শিল্পের জন্য প্রযুক্তির বড় সার্পোট দরকার। বাজুসকে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অনেক কর্মসূচি নিতে হবে। আপনাদের দক্ষতা উন্নয়ন করেন। জুয়েলারি ডিজাউন, বিক্রয় ও মধ্যস্থতাকারীদের দক্ষতা বড় সমস্যা।

ছবি: জিএম মুজিবুর

মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, দেশে জুয়েলারি শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। অনেক রাজস্ব আয় হতে পারে। ভারত এখন ৩ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছে, অথচ আমাদের দেশে ৫ শতাংশ। এটা হতে পারে না। আমি আশা করবো বাজুসের সঙ্গে এ সব বিষয়ে এফবিসিসিআই নিবিড়ভাবে কাজ করবে। যেসব খাত থেকে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান হবে সেসব সেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে চায় এফবিসিসিআই। আমার লক্ষ্য হলো ব্যবসা, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়ানো।

বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত আমাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করবো, আমরা সবাই, নতুন যে কমিটি হয়েছে- একত্রিত হয়ে এই শিল্পটাকে আগামীতে উন্নত করার চেষ্টা করবো। আমি এ পর্যন্ত দেখেছি, জুয়েলারি শিল্পে শুধু আমদানিই করা হয়। এখনো আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাতে পারিনি।

বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর আরও বলেন, দেশে জুয়েলারি শিল্পের আরও প্রসার ও রফতানি ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাতে হবে। আমার মূলত লক্ষ্যটা থাকবে জুয়েলারি শিল্পের প্রসার। এক্ষেত্রে ভ্যাট ও কর সমস্যা চিহিৃত করে সমাধানের চেষ্টা করবো জুয়েলারি শিল্পের প্রসারের জন্য। জুয়েলারি শিল্পে আমরা রফতানিকারক দেশে পরিণত হতে চাই।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাজুসের বিদায়ী সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, আমার জীবনে যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে, তা বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের আগমনের মধ্য দিয়ে ঘুচে গেছে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ আমাকে একদিন স্মরণ করবে এই বলে যে, সায়েম সোবহান আনভীরের মতো একজন মানুষের হাতে আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পেরেছি। আজ নতুন যারা এসেছেন, তাদের উৎসাহ দেওয়ার সময়। এই উৎসাহ বৃদ্ধি করাই আমাদের কাজ। বাজুসের মর্যাদা বাড়লে, আমাদেরও মর্যাদা বাড়বে। সায়েম সোবহান আনভীরের হাত ধরে কাজ করলে, কোনো কিছু অর্জন বাকি থাকবে না। তার হাত ধরেই আমাদের ভ্যাট ও করের সমস্যা সমাধান হবে।

বাজুসের পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। সমস্যা সমাধানে আমরা কিছু স্ট্যান্ডিং কমিটি করবো। আমাদের সমস্যা দেশবাসীকে জানাবো। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর বাজুস নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। এতে বাজুস নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। তার সঙ্গে নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল এবং ঢাকা চেম্বারের পরিচালক হোসেন এ শিকদার। বাজুস নির্বাচনে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিন হেলালী। আপিল বোর্ডের দুই সদস্য ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের দুই পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান ও এম. জি. আর. নাসির মজুমদার।

নির্বাচন বোর্ড ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলের তথ্যনুযায়ী সংগঠনটির ২০২১- ২০২৩ মেয়াদে নবনির্বাচিত সভাপতি বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে নির্বাচিত ৭ জন সহসভাপতি হলেন- মেসার্স দি আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার গুলজার আহমেদ, নিউ জেনারেল জুয়েলার্স লিমিটেডের আনোয়ার হোসেন, অলংকার নিকেতন (প্রা:) লিমিটেডের এম. এ. হান্নান আজদ, জড়োয়া হাউজ (প্রা:) লিমিটেডের বাদল চন্দ্র রায়, সিরাজ জুয়েলার্সের ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, এল. রহমান জুয়েলার্সের মো. আনিসুর রহমান দুলাল এবং দি আমিন জুয়েলার্সের কাজী নাজনীন ইসলাম নিপা।

বাজুসের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটিতে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআই পরিচালক এবং সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এই কমিটিতে নির্বাচিত ৯ জন সহ-সম্পাদক হলেন- ক্রমানুসারে গোল্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার মাসুদুর রহমান, ফেন্সী ডায়মন্ডের সমিত ঘোষ অপু, ভেনাস ডায়মন্ড কালেকশনের বিধান মালাকার, মেসার্স রিজভী জুয়েলার্সের মো. জয়নাল আবেদীন খোকন, নিউ সোনারতরী জুয়েলার্সের মো. লিটন হাওলাদার, মেসার্স বৈশাখী জুয়েলার্সের নারায়াণ চন্দ্র দে, মনি মালা জুয়েলার্সের মো. তাজুল ইসলাম লাভলু, গোল্ড কিং জুয়েলার্সের এনামুল হক ভুঞা লিটন এবং পূরবী জুয়েলার্স (প্রা:) লিমিটেডের মুক্তা ঘোষ।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুসের নবনির্বাচিত কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মেসার্স কুন্দন জুয়েলারি হাউজ ও জায়া গোল্ডের কর্ণধার উত্তম বণিক। একইসঙ্গে নবনির্বাচিত কমিটিতে ১৬ জন সদস্য হলেন- ক্রমানুসারে গ্রামীণ ডায়মন্ড হাউজের কর্ণধার ও বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, শারমিন জুয়েলার্স ও ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভাসের কর্ণধার এবং বাজুসের বিদায়ী সভাপতি এনামুল হক খান দোলন, সুলতানা জুয়েলার্স (প্রা:) লিমিটেডের মোহাম্মদ বাবুল মিয়া, দি ডায়মন্ড সী’র মো. ইমরান চৌধুরী, পি.সি. চন্দ্র জুয়েলার্সের পবিত্র চন্দ্র ঘোষ, জুয়েলারি হাউজের মো. রিপনুল হাসান, রহমান জুয়েলার্সের আলহাজ্ব মো. মজিবুর রহমান খান, মেসার্স লিলি জুয়েলার্সের বাবলু দত্ত, রজনীগন্ধা জুয়েলার্স লিমিটেডের মো. শহিদুল ইসলাম (এম.ডি.), দি পার্ল ওয়েসিস জুয়েলার্সের জয়দেব সাহা, মেসার্স সাজনী জুয়েলার্সের ইকবাল উদ্দিন, শতরূপা জুয়েলার্সের কার্তিক কর্মকার, আফতাব জুয়েলার্সের উত্তম ঘোষ, শৈলী জুয়েলার্সের মো. ফেরদৌস আলম শাহীন, জারা গোল্ডের কাজী নাজনীন হোসেন জারা এবং রয়েল মালাবার জুয়েলার্স (বিডি) লিমিটেডের মো. আসলাম খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।