ঢাকা: করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখনও ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধা ২০২২সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংঠন এফবিসিসিআই।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংককে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত এফবিসিসিআইর বার্ষিক সাধারণ সভায় (২০১৯-২০২০) তিনি এ আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঋণ শ্রেণীকরণের মেয়াদ বাড়ালে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি আসবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত সম্ভব হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি তাড়াহুড়ো করে নতুন আয়কর আইন চুড়ান্ত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমানে একটি আয়কর আইন প্রযোজ্য রয়েছে, তাই এফবিসিসিআইসহ সব সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নতুন আইন প্রণয়ণ করা উচিৎ। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও উন্নয়নশীল দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দেশের সবখাতের ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় কমিটি এবং এর অধীন বিভিন্ন উপ-কমিটি সভায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এফবিসিসিআই। এছাড়াও ২০২৬ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পলিসি অ্যাডভোকেসির অংশ হিসেবে ‘ইন্টারনাল রিসোর্স মোবিলাইজেশন অ্যান্ড ট্যারিফ রেশনালাইজেশন’, ‘গ্লোবাল মার্কেট এক্সেস ২০২১-২০২৬ অ্যান্ড বিয়ন্ড’, ‘ইনভেস্টমেন্ট মেজারস ফর সাসটেইনেবল ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট’ ও ‘সাসটেইনেবল এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট, সাবসিডিস অ্যান্ড ইনসেনটিভস’ শীর্ষক চারটি কর্মকৌশল হ্যান্ডবুক আকারে প্রণয়ন করা হয়েছে। যা শিগগিরই সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। একই সঙ্গে খাতভিত্তিক সক্ষমতা বাড়াতে এফবিসিসিআইতে ইনোভেশন সেন্টার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এফবিসিসিআইকে সত্যিকার অর্থে গবেষণাভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করতে খাতভিত্তিক ১৮ জন প্যানেল এডভাইজর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে কোন বিষয়ে নীতি প্রণয়ণে এসব বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সরকারের কাছে এফবিসিসিআই তার সুপারিশ আরও শক্তিশালীভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হবে।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনটির দরজা সব ব্যবসায়ীর জন্য খোলা। তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে পাশে থাকবে এফবিসিসিআই। এরইমধ্যে ৭৮টি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। খাতভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও দ্রুত সমাধানে কাজ করবে এসব কমিটি।
দেশের শিল্প কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এফবিসিসিআই যৌথভাবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে এফবিসিসিআইতে সেফটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কোভিডকালিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশব্যাপী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করেছে এফবিসিসিআই। এছাড়াও, বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তীকে স্বরণীয় করতে এফবিসিসিআই আয়োজন করেছে ১৬ দিনব্যাপী ‘বিজয়ের ৫০ বছর: লাল-সবুজের মহোৎসব’। স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে ৫০ জন ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধাকে সংবধর্না দেবে এফবিসিসিআই।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণজনিত কারণে, ২০১৯-২০২০ সময়ের বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। সেই সভাটিই অনুষ্ঠিত হলো রোববার।
মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বার্ষিক সভায় সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দীন আলমগীর, মো. হাবীব উল্লাহ ডন ও এম. এ. রাজ্জাক খান রাজ এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআইর সাধারণ পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সভায় ২০১৯-২০২০ বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরে বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
এসই/এমএমজেড