ঢাকা: করোনা মহামারিতে চলতি বছর বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের নজর অন্য দিকে থাকায় স্বর্ণে বিনিয়োগ কমে যায়। তাই স্বর্ণের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে।
চলতি বছরজুড়ে বিনিয়োগ নিয়ে একটি জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান। এতে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিত ১ বা ২ শতাংশ থেকে প্রায় ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পরও স্বর্ণের জনপ্রিয়তা ৬ শতাংশ কমেছে।
২০১১-১২ সালে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম স্থির ছিল। এরপর থেকে ডলারের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউমন্ট করপোরেশন (এনইএম) ০.৪ শতাংশ এবং কানাডার বারিক গোল্ড করপোরেশন ০.৫ শতাংশ স্বর্ণ মজুদ করে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও উন্নত হয়।
ওই সময়ে স্বর্ণ ও স্বর্ণের খনি মজুদে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কোম্পানি দুটি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। তখন কোম্পানি দুটির আয়ের পরিমাণ ছিল ৬ শতাংশ। এরপরও তারা ভালো মুনাফা করে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের অন্য শেয়ারের চেয়ে তাদের শেয়ারের চাহিদা বেশি ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণে বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ থেকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজার বিশ্লেষক জন এস টোবেই যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বস-এ তার মতামত তুলে ধরেন।
জন এস টোবেই মনে করেন, আগের ১০ বছরের তুলনায় ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, যা আবার বাড়তে থাকায় উদ্বেগ শুরু হয়েছে। তবুও ২০২২ সালে স্বর্ণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।
উদাহরণ টেনে জন এস টোবেই বলেন, ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ সালের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি কীভাবে মানুষের আস্থা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে। ১৯৬৫ সালে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রির্জাভ উদ্বিগ্ন হয়।
ওই বছর মার্কিন শেয়ার বাজারের ১ নম্বর কোম্পানি ছিল জেনারেল মোটরস। এর প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয়েছিল অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ দামে। ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ফেডারেল রির্জাভ। কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
১৯৬৬ সালের শেষের দিকে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এতে করে অনিচ্ছাকৃতভাবে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়। আক্রমণাত্মক আর্থিক কৌশলে তখন মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ে।
ওই সিদ্ধান্তের ফলে ১৯৬৬ সালের শেষে দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়। তখন সদ্য বাজারে আসা রৌপ্য খনির (হেকলা মাইনিং ১.৮ শতাংশ) শেয়ারে তারা বিনিয়োগ করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই বিনিয়োগ ভালোভাবেই কাজ করে।
আর্ন্তজাতিক শেয়ারবাজার বিশ্লেষক জন এস টোবেই বলেন, ৫৫ বছরের পুরোনো সেই মডেলে ২০২২ সালে আবার স্বর্ণ বা রৌপ্যে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। এতে করে ধাতু দুটির দাম আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
এসই/জেএইচটি