ফেনী: আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কথা বলছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আয় বাড়েনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের।
গত দুই বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দর পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে মাছ, মাংস এবং সবজির দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে।
এ সময়কালে বাজারে মোটা চাল ৩৬ দশমিক ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬০ টাকা থেকে ৭২ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১০৫ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, চিনি ৬৬ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, মসুর ডাল ৬৭ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ১১৯ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১১৫ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা, গরুর মাংস ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা, মৌসুমি সবজির দাম বেড়েছে গড়ে দ্বিগুণ, সুগন্ধি সাবান ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবার। আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বাড়াতে পরিবারগুলোতে তৈরি হয়েছে বাজার ভীতি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্তের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে শহরের একটি ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাহিদুল ইসলাম হৃদয় বলেন, গত কয়দিন আগে বাজারে একজন ছেলে ১০ টাকার তেল কিনতে আসেন, এটি একটি করুণদৃশ্য।
ফেনী শহরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুল রশিদ নামে এক শিক্ষক বলেন, ২২ হাজার টাকা বেতনে আগে পরিবারে সব ধরনের খরচ ও মাস শেষে কিছু টাকা সঞ্চয় করা যেতো। কিন্তু গত দেড় বছরে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য এভাবে বাড়তে থাকলে মানুষের জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হবে। আপাতত খরচ কমাতে যথাসম্ভব বাজার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি।
মো. জাকারিয়া নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত ব্যয় বাড়লেও আয় আগের পরিমাণই আছে। তন্মধ্যে করোনাকালীন সংকটতো আছেই। অবস্থা এমন কাউকে কিছু বলার বা চাওয়ার মতো অবস্থাও থাকে না। প্রতিমাসে এখন নিজ বেতন খরচ করে ধার-দেনা করে চলতে হয়।
গৃহিণী রহিমা আক্তার বলেন, দাম বাড়লেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা উদ্যোগ না নিলে আমরা কখনও কিছুই করতে পারব না। আমাদের মতো মানুষরা না খেলেও কার কী আসে যায়।
নিলয় নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আগে এক লিটার প্যাকেটজাত তেল ৯০ টাকায় কিনেছি। এখন তার অর্ধেক পরিমাণ কিনতে হচ্ছে ৮৫ টাকায়। আমরা শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময় প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ যোগাড় করি। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। মাছ, মাংস থেকে শুরু সবজি সবকিছুতেই ক্রেতার চাহিদা কমেছে।
সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেটে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন ইকবাল। তিনি বলেন, দুই বছর আগেও প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হত। এখন তা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল বশর বলেন, বাজারে ক্রেতা তেমন না কমলেও চাহিদা কমেছে। যেসব ক্রেতা আগে ব্যাগভর্তি সবজি কিনতেন তারা এখন হিসেব করে কিনছেন।
সবজির আড়তদার আবদুল মতিন পারভেজ বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে এবার সবজির উৎপাদন কম। কিন্তু বাজারে চাহিদা কমাতে এর প্রভাব বোঝা যাচ্ছে না। যতটুকু চাহিদা ততটুকুই যোগান হওয়াতে দামও কমছে না। পাশাপাশি পাইকারি এবং খুচরা বাজারে রয়েছে বিশাল ফারাক। ফুলকপি খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকার নিচে। তবে, পচনশীল দ্রব্য হওয়ার কারণে খুচরা বিক্রেতারা অধিক দামে বিক্রি করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
এসএইচডি/এএটি