বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দের বড় অংশই চলে যায় সার কেনার বর্ধিত মূল্য পরিশোধে। এবছর ইউক্রেন যুদ্ধে খাদ্য ও সার আমদানিতেও অতিরিক্ত খরচ হয়েছে সরকারের।
সরকার বিশ্ববাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে আমদানি করলেও দেশে কোনো সারের দামই বাড়ায়নি। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও দাম বাড়াতে রাজি হয়নি সরকার।
খাদ্য উৎপাদনে ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে সরকারের এ উদ্যোগের সঙ্গে একমত কৃষি সংশ্লিষ্টরাও।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষক কে এ এস মুরশিদ বলেন, আগামী বাজেটে অবশ্যই আমাদের কৃষির ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আমাদের বাজারে ধান ওঠার পরে চালের দাম কম থাকত। এখন সেরকম হচ্ছে না। তার মানে বাজার মনে করছে, সামনে সংকট হবে।
দেশে এক মাসের ব্যাবধানে কিছু চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানি ও ভোজ্য তেলসহ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে এপ্রিলে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে।
এ অবস্থায় কৃষিতে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে মূল্যস্ফীতি কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাঈদুর রহমান বলেন, সরকার কৃষিকে গুরুত্ব সহকারে দেখেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কৃষি খাতের উন্নয়ন বরাদ্দ যেন যথাযথভাবে ব্যয় হয় এবং প্রয়োজনে আরো নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করে বরাদ্দ বাড়ানো হলে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে কৃষিজীবী মানুষ স্বস্তিতে ফিরতে পারবে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ব্যয় কমাতে হবে। এছাড়া, কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ মো আব্দুস সালাম বলেন, কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। এটার জন্যে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্যে কৃষককে প্রশিক্ষণ দেবার জন্যে বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, কৃষক যদি বাঁচে তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরা বাঁচব। কৃষিতে যদি সরকার গুরুত্ব দেয় এবং সার-তেল বিনামূল্যে দেয়, তাহলে আমার মনে হয় দেশের আরও উন্নতি হবে।
যশোরের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের জন্যও সরকারি বাজেট সরাসরি পৌঁছালে কৃষি উৎপাদন সামনে আরও বাড়বে।
জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের জন্য কৃষিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি বাবদ ভর্তুকি আরও বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আগামী বছর কৃষি খাতে বিশেষ করে সারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের পরিমাণ না বাড়ানোর বিকল্প নেই। সারের দাম বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব সরকার নাকচ করে দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে শুরুতে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। সেটি সংশোধিত বাজেটে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এতে মোট ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা।
অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ইউরিয়া সার প্রতিকেজির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৯৬ টাকায় দাঁড়ায়। টিএসপি ৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা থেকে বেড়ে ৫৪ টাকা এবং ডিএপি সারের দাম ৩৭ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩ টাকায় ওঠে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর মোট ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এ বছর মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২২
এনবি/এসআইএস