ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘রাজা বাবু’র দিনের বাজেট হাজার টাকা, খায় কলা-ছোলা 

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
‘রাজা বাবু’র দিনের বাজেট হাজার টাকা, খায় কলা-ছোলা 

মেহেরপুর: মুজিবনগরের রাজা বাবু। দেখতে যেন কালা পাহাড়।

রাজা বাবুই এবারের কোরবানির ঈদে দেশের সবচেয়ে বড় গরু বলে ধারণা করছেন মুজিবনগরবাসী।

গরুটির মালিক মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালি গ্রামের কৃষক ইনছান আলী। আদর করেই গরুটির নাম দিয়েছেন মুজিবনগরের রাজা বাবু।

১০ ফুট লম্বা, ছয় ফুট উচ্চতার এ রাজা বাবুর ওজন প্রায় ৪৫ মণ! দুই বছর ১০ মাস বয়সী ‘রাজা বাবু’কে সন্তানের মতই ভালবাসা আর আদরে রেখেছেন ইনছান আলী ও তার পরিবারের লোকজন।

বিশাল এ ষাঁড়ের জন্য প্রতিদিনের বাজেট প্রায় এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। খাবারের তলিকায় থাকে কলা, ভুট্টা, ছোলা, গম, ভাত চিড়া, তাজা ঘাস ও সামান্য বিচালিসহ অন্যান্য দামি খাবার।

আদর-যত্নের পাশাপাশি রাজা বাবুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন গরুর মালিক ইনছান আলী। রাজা বাবুর নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে বাড়ির সবাই সতর্ক থাকেন।

ইনছান আলী বলেন, চার মাস বয়সী হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের রাজা বাবুকে ৮৫ হাজার টাকায় পাশের গ্রাম বিদ্যাধরপুর থেকে কিনেছিলাম। পরম মমতা আর আদর দিয়ে তাকে গড়ে তুলেছি। আজ পর্যন্ত রাজা বাবুর সামান্য সর্দি জ্বর বা অন্য কোনো রোগ বালাই হয়নি। তাকে চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যেতে হয়নি।

তিনি আসছে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মুজিবনগরের রাজা বাবুর দাম হাঁকাচ্ছেন ২০ লাখ টাকা। ‘মুজিবনগরের রাজা বাবু’ই আকার, আকৃতি ও ওজনের দিক থেকে দেশের সবচাইতে বড় গরু বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

তিনি বলেন, ‘রাজা বাবু’কে দেখতে প্রতিদিনই বাড়িতে ভিড় করেন এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী লোকজন।

পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, কালিগঞ্জ, নওপাড়া, আলমডাঙ্গা, হাউলি, দামুড়হুদাসহ বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরাও আসছেন। দাম-দরও করছেন। এরই মধ্যে গরুর দাম ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু তিনি অন্তত ২০ লাখ টাকা পেলে বাড়ি থেকেই বিক্রি করে দেবেন আদরের রাজা বাবুকে।

ইনছান আলীর স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, বিশাল গরুটিকে আমি নিজের সন্তানের মতই ভালোবাসি। দিনে দুইবার গোসল করাতে হয়। গোয়াল ঘরটিও দুই বেলা পরিষ্কার করতে হয়। সারাদিনই প্রায় যত্ন করতে হয় তাকে। রাজা বাবুর বিক্রির কথা উঠলেই বুকটা ফেটে যায়। চোখের পানি ঠেকাতে পারি না।  

ইনছান আলীর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে সেজুতি শবনম বলেন, রাজা বাবুকে আমাদের কাছে প্রাণী মনে হয় না, মনে হয় এটি যেন মানুষই। দেখতে বিশাল হলেও রাজা বাবু খুব শান্ত স্বভাবের। রাজা বাবু যেদিন বিক্রি হয়ে যাবে, সেদিন হয়ত খুব কষ্ট হবে আমাদের।

ইনছান আলীর ভাই আজগর আলী ও প্রতিবেশী মনিরুল ইসলাম জানান, শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে গরুটিকে প্রতিদিন বিকেলে গ্রামের মধ্য দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটানো হয়। হাঁটানোর সময় গরুটিকে দেখতে অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। গরুটির সুন্দর চেহারায় অনেকেই মুগ্ধ হন।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইদুর রহমান বলেন, রাজা বাবুকে দেখতে গিয়েছি। চার দাঁতের রাজা বাবুর আকার ও ওজন পরিমাপ করে দেখা যায়, গরুটির উচ্চতাছয় ফুট, লম্বা ১০ ফুট, বুকের পরিমাপ ১০ ফুট, মুখের চওড়া সাড়ে তিন ফুট, গলার বেড় ৫ ফুট, শিং চার থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন প্রায় ৫০ মণ। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে গরুটির চিকিৎসা, খাদ্য তালিকা ও অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমার জানা মতে, এ গরুটিই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় গরু।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
এসআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।