মানিকগঞ্জ: কাঁচা মরিচ চাষে খ্যাতি অর্জন করেছে মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলা। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে এই কাঁচা মরিচ রপ্তানি করে সুনাম অর্জন করেছেন জেলার চাষিরা।
আবহাওয়া ও অনুকূল পরিবেশ হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই মরিচের ফলন ভালো হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, কুয়েত ও সৌদি আরবে রপ্তানি হচ্ছে মানিকগঞ্জের মরিচ। মরিচের দাম ও চাহিদা নির্ভর করে প্লেনের ওপর। কারণ সঠিক সময়ে প্লেনের কার্গো বুকিং এবং ফ্লাইট বিপর্যয়ে এই মরিচের বাজারদর ওঠা-নামা করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় ৭০ হেক্টর, সিংগাইরে ৬৫ হেক্টর, সাটুরিয়ায় ৪০ হেক্টর, ঘিওরে ৩০০ হেক্টর, দৌলতপুরে ৫৫ হেক্টর, শিবালয়ে ১২০০ হেক্টর ও হরিরামপুরে ১২৮৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু বেশি জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে।
সদর উপজেলায় ৯০ হেক্টর, সিংগাইরে ৮০ হেক্টর, সাটুরিয়ায় ৪৭ হেক্টর, ঘিওরে ৩৩০ হেক্টর, দৌলতপুরে ৫৩ হেক্টর, শিবালয়ে ১০২৬ হেক্টর, হরিরামপুরে ১৬৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বরঙ্গাইল। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কৃষক তার জমি থেকে মরিচ তুলে এই বাজারে নিয়ে আসেন। এ বাজারের আড়ৎদাররা মরিচ কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। অনেক পাইকার এই মরিচ কিনে এক্সপোর্টারের মাধ্যমে দেশের বাইরে পাঠান। প্রথমে মরিচ কিনে আড়তে রাখেন পরে কাগজের কার্টনে ভরে ৫ থেকে ৯ কেজির প্যাকেট করেন। মরিচ রপ্তানি করার আগে প্রতিটি কার্টনে এক্সপোর্টারের স্টিকার লাগানো হয়, তারপর গাড়িতে করে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বরঙ্গাইল পাইকারি আড়তের মেসার্স তাজ বাণিজ্যালয়ের তাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে কিছুদিন আগেও কারেন্ট মরিচের চাষ হত যার দুবাইয়ে বেশ চাহিদা ছিল। এখন বিন্দু মরিচের চাহিদা বেশি হওয়াতে এই মরচিগুলো মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে যাচ্ছে। আমরা যারা আড়তদার আছি তাদের আড়তদারি দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টন মরিচ এক্সপোর্টাররা নিয়ে যায় ঢাকাতে এবং সেখান থেকে প্লেনে করে বিভিন্ন দেশে যায়।
বরঙ্গাইল পাইকারি আড়তের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সিদ্দীক মোল্লা বলেন, এই বরঙ্গাইল আড়ত দেশের মধ্যে অন্যতম কারণ এই আড়তের কাঁচা মরিচ বিদেশে রপ্তানি হয়। কাঁচা মরিচ বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পরপরই আবাদ যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি কৃষক লাভবান হচ্ছেন। হাটবারে মরিচ আমদানি বেশি হয় কিন্তু বাকি দিনগুলোতে গড়ে প্রায় ১০ টন মরিচ এখান থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ায় মরিচ রপ্তানিকারক সুমাইয়া অ্যান্ড ব্রাদার্সের এমডি মিরাজ-উল ইসলাম বলেন, এই জেলা থেকে প্রতিদিন আট থেকে দশ টন মরিচ বিদেশে যাচ্ছে প্লেনের কার্গোতে করে। আমাদের দেশ থেকে গার্মেন্টস সামগ্রীর পাশাপাশি যদি প্যারিসিবল সামগ্রীর জন্য আরও কিছু প্লেনে জায়গা করে দিত তবে ভালো হত। প্লেনে যান্ত্রিক ত্রুটি হয় বা সিডিউল বিপর্যয় হয় এটা যদি আগের দিন জানিয়ে দিতে পারে তবে আমাদের লোকসানের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। হঠাৎ করে বললে আমাদের লোকাল বাজারে কম দামে মরিচগুলো বিক্রি করতে হয় বলেও জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মুহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ বলেন, কারেন্ট মরিচ শেষ হলেই বিন্দু মরিচ চলে আসে বাজারে। এই জেলা থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মরিচ দেশের বাইরে যাচ্ছে। স্থানীয় চাষিরা ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে আমাদের কালেকশন সেন্টারে নিয়ে আসে। পরে একটি মিডিয়া ঢাকাতে নিয়ে যায়, এছাড়া বরঙ্গাইল আড়তে এসেও অনেক এক্সপোর্টাররা মরিচ নিয়ে যায়।
মরিচের বাজার দর প্লেনের ভাড়ার ওপর কিছুটা নির্ভর করে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু তেলের দাম বেড়ে গেছে সেজন্য বিমানের ভাড়াও হয়তো বেড়েছে। যদি কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু ভর্তুকি দেওয়া হত তবে আমাদের দেশ থেকে অনেক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যেত বলেও মন্তব্য করেন উপ-পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২২
আরএ