ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় হোটেল ব্যবসায় ধসের শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় হোটেল ব্যবসায় ধসের শঙ্কা

মানিকগঞ্জ: চলতি মাসের ২৫ জুন পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এটা দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে সেইসঙ্গে দেশের অন্যতম নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে আসবে।

তবে যানবাহনের চাপ কমে এলে এই নৌরুটের উভয় পারের খাবার হোটেলের বিকিনিকি কমে আসবে এ আশঙ্কায় দিন পার করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু (তৎকালীন যমুনা বহুমুখী সেতু) চালু হলে আরিচায় কমতে থাকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ, অন্যদিকে নদীতে নাব্যতা সংকটে ভাটা পড়ে আরিচা বন্দর। ২০০১ সালে নদীপথ ছোট করার জন্য ফেরিঘাট স্থানান্তর হয় পাটুরিয়ায় এবং এর পরেই যৌবনময় আরিচা ঘাট প্রাণহীন হয়ে পড়ে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নামের একটি ফেরি দিয়ে আরিচা ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়। ওই সময় একটি গাড়ি পার হয়েছিল এবং তার ভাড়া গুনতে হয়েছে ৭৫ পয়সা। দীর্ঘদিন চলে এই ফেরি ঘাটটি, আরিচা ফেরিঘাটটি ১৯৮৩ সালে নদী বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। নাব্যতা সংকট, নদীপথ বৃহৎ এবং ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়াতে ২০০১ সালে আরিচা ঘাটটি স্থানান্তরিত হয় পাটুরিয়ায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, আরিচা ঘাট যখন পাটুরিয়ায় স্থানান্তরিত হয় তখন ওই অঞ্চলের হোটেল ব্যবসায়ীরা তাদের সব কিছু পাটুরিয়ায় এনে পুনরায় ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন এবং তাতে তারা সফলও হন।  

নৌপথের হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের অর্থ উপার্জনের একটি মাত্র মাধ্যম হলো ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি এবং যানজট। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে আর তেমন কোনো যানবাহন এই নৌরুট দিয়ে আসবে না এমন আশঙ্কায় দিন পার করছে ঘাট সংশ্লিষ্টরা। ভোগান্তি আর সিন্ডিকেটের কারণে ৬০ শতাংশ যানবাহন ও যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হবে এমনটাই বললেন পাটুরিয়ায় একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী।

পাটুরিয়ায় ভাই ভাই স্টাফ হোটেলের মালিক বাবু রমেন চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলা বাবার সঙ্গে আরিচা ঘাটে হোটেল ব্যবসা করছি, আরিচা ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে পাটুরিয়ায় ব্যবসায় করছি। এখন শুনছি পদ্মা সেতু চালু হলে আমাগো এই নৌপথ দিয়ে তেমন যানবাহন আর আসবো না। যানবাহনের চাপ কমে গেলে বৌ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হইবো কারণ আমি আর অন্য কোনো কাজ শিখি নাই।  

লুৎফর নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, পাটুরিয়ায় প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে আর এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত দুই হাজার পরিবার। ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ কমে গেলে বেচাবিক্রি কমে যাবে তখন পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিবহনের চালক বলেন, এই ঘাটে প্রায় ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশ পথ, সব গাড়ি কিন্তু পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়ার কথা না। তবে শুধুমাত্র লোকাল দালালদের কারণে বাধ্য হয়ে সেতু পার হয়ে যাবে।  

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন এটা আমাদের জন্য বড় একটি পাওয়া, কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।  

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমবে কি না এমন প্রশ্নের তিনি আরও বলেন, ঘাটে আগত ছোট গাড়ি (প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস) ৭০ শতাংশ পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হবে। তবে সাধারণ পণ্য বোঝাই ট্রাক যে পরিমাণ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট দিয়ে পার হয় সে সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। দেশে প্রতিদিন যানবাহন বাড়ছে আর সেই দিক দিয়ে চিন্তা করলে যাত্রীবাহী পরিবহনও বাড়বে, কিন্তু ঘাটে যানজটে যে সময়টুকু নৌপথ পারের অপেক্ষায় থাকতে হতো সেই সময়টুকু আর অপেক্ষায় আর থাকতে হবে না বলেও মন্তব্য করেন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ১৩ জুন, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।