ঢাকা: ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন তাতে দেশের নির্মাণ তথা আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। এছাড়া এই হিসেবে প্রতি বর্গফুটের জন্য গ্রাহককে বাড়তি বহন করতে হবে প্রায় ১ হাজার টাকা।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটের কর ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১৫ শতাংশ, এআইটি ৫ শতাংশ ও এটি ৫ শতাংশ। এতে লিফট আমদানিতে শুল্ক-কর ১১ থেকে এক লাফে ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩০ শতাংশে উঠেছে। হঠাৎ করে এক লাফে এই মূল্য বৃদ্ধি ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়াবে।
শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে 'ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩ সম্পর্কিত রিহ্যাবের প্রতিক্রিয়া' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল।
সংবাদ সম্মেলনে বরা হয়, আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ এমএস রড। বিগত কয়েক মাসে দেশে দফায় দফায় এই রডের দাম বেড়েছে। রডের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আমরা চেয়েছিলাম, ইস্পাতের কাঁচামালের ওপর শুল্ক কর কমানো হোক। সেটি না করে উল্টো বিক্রয় পর্যায়ে প্রতি টন বিলেটের ওপর ২০০ টাকা ও রডে ২০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়ানো হয়েছে। ফলে রডের দাম আরও বাড়বে।
এ সময় আরও জানানো হয়, ঘোষিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের তারের বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পাইপের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, জিআই ফিটিংসের বিপরীতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। টিউবসহ এ ধরনের পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এলোমনিয়া ফয়েলেরে ওপর আগে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত ছিল না। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এর ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মলনে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আমরা রড, সিমেন্ট, বালু, ইট, পাথরসহ ১০ থেকে ১১টি নির্মাণ সামগ্রীর ওপর স্টাডি করে দেখেছি কয়েক মাসের মূল্য বৃদ্ধিতে নতুন ও নির্মাণাধীন সব প্রকল্পে প্রতি বর্গফুটের ব্যয় প্রায় ৫০০ টাকা করে বেড়েছে। ৫০০ টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়লে প্রতি বর্গফুটের জন্য গ্রাহককে বাড়তি গুনতে হবে প্রায় ১ হাজার টাকা। কারণ আমরা ডেভেলপাররা অধিকাংশ জমি গ্রহণ করি ৫০:৫০ রেশিওতে। বাড়তি দাম 'সবার জন্য আবাসন' এই শ্লোগানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং অনেকের আবাসনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, ঘোষিত বাজেটের বাড়তি চাপ আমাদের সংকটকে আরও বাড়াবে এবং এই সেক্টর আরও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ২ কোটি মানুষের আয়ের এ খাতটি আরও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের স্বার্থে আমরা আবাসন খাতকে গতিশীল করার আহ্বান জানাই। মানুষ নিরাপদে মাথা গোঁজার জন্য একটা আবাসন চায়। সবার জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ পাস করার আগে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) দাবি এবং প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করার জন্য আপনাদের মাধ্যমে আবারও প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্তেখাবুল হামিদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ, নজরুল ইসলাম দুলাল ও লায়ন শরীফ আলী খানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ১৮ জুন, ২০২২
এইচএমএস/এমএমজেড