বাগেরহাট: বাগেরহাটে কোরবানির হাট কাঁপাতে প্রস্তুত মোল্লাহাটের ‘রোবো’। সাড়ে তিন বছর বয়সী ফ্রিজিয়ান জাতের রোবোর ওজন এখন ২৫ মণ।
মোল্লাহাট উপজেলার গাংনি ইউনিয়নের চরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মো. রাজিব শেখ। চাকরি করেন সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট শাখার সিনিয়র অফিসার হিসেবে। চাকরির পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে মাছ ও গরুর সমন্বিত খামার করেন তিনি। তার গরুর খামারে বর্তমানে আটটি গরু রয়েছে। এর মধ্যে এ ঈদে বিক্রি করার জন্য পাঁচটি ষাঁড় প্রস্তুত রয়েছে। এ পাঁচটির মধ্যে সব থেকে বড় ষাঁড়টির নাম রোবো। যার ওজন ২৫ মণ। অন্যগুলোও বেশ বড় বড়। মো. রাজিব শেখের খামারের একটি গাভী ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম দেয় রোবোকে। জন্মের পর থেকেই রোবোকে অনেক যত্ন করতেন রাজিব ও তার পরিবার। খামার দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোস্তফা শেখও একটু বেশি যত্ন নেন রোবোর। আস্তে আস্তে করে রোবো অনেক বড় হয়েছে। এবার কোরবানিতে রোবোকে বিক্রি করবেন এমনই আশা খামার মালিক রাজিবের।
তিনি বলেন, এ ষাঁড়টি আমাদের খুব আদরের। শিশু খাদ্য রোবোর নাম অনুযায়ী আমরা এ গরুটির নাম রেখেছি। ওকে আমরা খুবই যত্ন করি। ভূষি, খড়-কুটো, কাঁচা ঘাষের সঙ্গে ভাত, আম, কলাসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল খাওয়াই। কখনও কোনো স্টেরয়েড বা হরমন জাতীয় ওষুধ ওর শরীরে পুশ করা হয়নি। এমনকি গরুর জন্য বাণিজ্যিক খাবারও খাওয়াই না আমরা। সাড়ে তিন বছরে ও এত বড় হবে, এটা আমি বুঝতে পারিনি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। লাখ দশেক টাকা হলে ওকে বিক্রি করে দেব।
রাজিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অনৈতিক টাকার আশায় বসে না থেকে চাকরির পাশাপাশি কিছু করতে। সেই কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এখন আমি গরুর খামার শুরু করি। আল্লাহর রহমতে সফলও হয়েছি।
খামারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোস্তফা শেখ বলেন, আমাদের গোয়ালে আটটি গরু রয়েছে। গরুগুলোকে সকাল-বিকেল গোসল করাই। এর সঙ্গে সারাদিন বিভিন্ন খাবার-দাবার খাওয়াই। সব থেকে বেশি খায় কাঁচা ঘাষ। গরুর জন্য আমরা আলাদা করে ঘাষ চাষ করি। ওই ঘাষই গরুগুলোর প্রধান খাদ্য।
গরু দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা সরদার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার জানামতে এ উপজেলায় এত বড় গরু আর নেই। এলাকার অনেকেই গরুটি দেখতে আসেন। গরুটি অনেক বড়, খুবই সুন্দর দেখতে। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা তার চাকরির পাশাপাশি এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছেন, এটি দেখে এলাকার অনেকেই এখন গরু লালন-পালনে ঝুঁকছেন। আমরা চাই, এ গরু ভালো দামে বিক্রি হোক। এলাকার মানুষ আরও বেশি উৎসাহিত হোক।
গরু কিনতে আসা শরীফ শিকদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা মূলত প্রতি বছর বড় গরু কোরবানি দিই। এক বন্ধুর মাধ্যমে শুনে এ খামারে এসেছিলাম। গরুটা পছন্দ হয়েছে। দাম একটু বেশিই চাচ্ছেন তিনি। আলোচনার মাধ্যমে যদি কম-বেশি করে নেন, তাহলে আমরা নিতে পারি।
বাগেরেহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাগেরহাটে অনেক গবাদিপশু পালন করেছেন খামারি ও স্থানীয়রা। জেলার বেশিরভাগ খামারিই কাঁচা ঘাষ ও স্বাভাবিক খাবার খাইয়ে গরু পালন করেন। রাজিবের খামারটি অনেক পরিকল্পিত একটি খামার। এ খামারের গরুগুলোও ভালো। আমার জানা মতে, তারা কোনো স্টেরয়েড বা হরমোন ব্যবহার করেন না। আশা করি, তার গরু ভালো দামে বিক্রি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
এসআই