বগুড়া: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বগুড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে দর কষাকষি ও বেচাকেনা।
সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে বগুড়া শহরতলীর বনানী এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে গিয়ে এমন দৃশ্য নজরে পড়ে।
সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসছে। আর তাই প্রতিবছরের মতো সপ্তাহের হাট আজ দুপুর ১২টা থেকেই। হাটে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। পশুর এ হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরে ধীরে কোরবানির পশু আসতে শুরু করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িবোঝাই করে ও হেঁটে নিয়ে আসা পশুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। একটা থেকে দুটোর মধ্যেই হাটের প্রায় পুরো স্থানই কোরবানির পশু দিয়ে ভরে যায়। বলা চলে, দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান ফটক দিয়ে হাটের ভেতরে প্রবেশ করে কিছু দূর যেতেই অসংখ্য গরুর মাঝে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি বড় আকারের ষাঁড়ের। এ স্থানে হাটের বড় বড় ষাঁড়ের বেচাকেনা হয়ে থাকে। ষাঁড়গুলোর মালিকরা দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ষাঁড়গুলো দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতারাও। কেউ কেউ নেড়ে-চেড়ে দেখছিলেন।
তবে হাটে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মাঝারি আকারের গরু। বড় ও বেশি দামের গরু কেনার মতো ক্রেতার সংখ্যাও রয়েছে বেশ। কিন্তু তার পরেও বড় আকারের গরুর মালিকরা একটু দেখেশুনেই তাদের পশুটি বিক্রি করতে চান।
দেশীয় জাতের চারটি বড় ষাঁড়ের মালিক আতাহার আলী বাংলানিউজকে জানান, এ হাটে নিয়ে আসা তার ষাঁড়গুলোর দাম চাওয়া প্রতি জোড়া পাঁচ লাখ টাকা। সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাম উঠেছে। অন্য এক জোড়ারও একই দাম উঠেছে। তবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে ছেড়ে দেবেন তিনি। অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে লালন-পালন করা গরুগুলোর ন্যায্য দামের আশায় বুক বেঁধে আছেন তিনি।
আশানুরুপ দাম মিললে তার পরিশ্রম ও কষ্টগুলো দূর হবে বলেও মন্তব্য করেন এ খামারি। সদর উপজেলার মিল্লাত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ বছর তার বাড়িতে নয়টি মাঝারি ও আকারের ষাঁড় প্রস্তুত হয়েছে। সেগুলো হাটে এসেছে। পালন করা তার ষাঁড়ের প্রত্যেকটির দাম চাওয়া ১ থেকে ২ লাখ টাকা। তবে দাম দরের মাধ্যমে এর কম হলেও বিক্রি করে দেবেন তিনি। ইতোমধ্যে তার ষাঁড়গুলোর দাম করেছেন ক্রেতারা। এর মধ্যে মাঝারি বড়টির দাম একজন এক লাখ ১০ হাজার ও আরেকজন ৯০ হাজার টাকা বলেছেন। আর ছোটগুলোর দাম উঠেছে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার।
আতিকুর রহমান, শাহাদত হোসেন, বিল্লাহ মিয়া, সাইফ আকবর নামে কয়েকজন ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, তারা সাধারণ ক্রেতারা হাটে ঢুকেই মাঝারি আকারের গরুর দিকে ছুটে যান। এ বছর হাটে আসা বেশির ভাগ ক্রেতারই বাজেট ১ লাখ থেকে ১৩০ হাজার টাকার মধ্যে। আবার অনেক ক্রেতাই ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির পশু কিনতে হাটের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘোরাঘুরি করছেন।
তারা বলেন, মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক থাকায় বিক্রেতারা অনেকটা সুযোগ নিচ্ছেন। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফলে কোরবানির পশু কিনতে ব্যাপক দর দাম করতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। এবার বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২শ ৯৫টি গবাদিপশু কোরবানিযোগ্য করে তোলেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩শ ৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯শ ২০টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় (৩৪২০ জন খামারি) ৪৪ হাজার ৯৩৯টি, গাবতলীতে (৩০৩৯ জন খামারি) ৪০ হাজার ৩৯৩টি, সারিয়াকান্দিতে (৪৪৪৩ জন খামারি) ৩৮ হাজার ৮০৭টি, সোনাতলায় (৩৭৭৮ জন খামারি) ২৯ হাজার ১৮৮টি, শিবগঞ্জে (৪৪৬০ জন খামারি) ৪৩ হাজার ৮৪৫টি, কাহালুতে (২৪৯৬ জন খামারি) ৩৫ হাজার ৩১২টি, দুপচাঁচিয়ায় (৫৬৩০ জন খামারি) ৩২ হাজার ১৯৭টি, আদমদীঘিতে (২৪৩৪ জন খামারি) ৩০ হাজার ৬২টি, নন্দীগ্রামে (২২৬০ জন খামারি) ২৪ হাজার ৩৫৭টি, শেরপুরে (৫৩০৪ জন খামারি) ৪১ হাজার ১৮০টি, ধুনটে (৩৮৪৪ জন খামারি) ৩৭ হাজার ৭০৫টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় (৪৯০৭ জন খামারি) ২৯ হাজার ৩১০টি গবাদি পশু রয়েছে। এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বদল ও গাভী) ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭শ ৯৮টি, মহিষ ১ হাজার ৭শ ৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫শ ৩৮টি এবং ভেড়া ২৮ হাজার ২শ ২৬টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে। তাই ঈদে কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না বরং চাহিদার অতিরিক্ত রয়েছে। তিনি জানান, বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যেন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার না করেন সেজন্য ইতোপূর্বেই প্রচারণা চালানো হয়েছে। হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে মেডিক্যাল টিম বসানো হয়েছে। জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে স্ব-স্ব প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এ কাজের দেখভাল করছেন।
জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৩৮টির মতো এবং অস্থায়ী আরও প্রায় ৪০টি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ পর্যায়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রি চলছে। জেলার কোরবানিযোগ্য ছোট-বড় গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে এমন মন্তব্যও করেন ওই কর্মকর্তা
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
এএটি