বগুড়া: বিশাল দেহাকৃতির ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম পাহাড়ি বুল। প্রায় ২৩ মণ ওজনের ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচি ইউনিয়নের গনক পাড়া গ্রামের মা-বাবা ডেইরি ফার্মে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ষাঁড়টির জন্মের পর থেকে প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে লালন-পালন করে আসছেন। তিনি গরুটির মালিক হলেও ষাঁড়টির দেখভাল থেকে শুরু করে সবকিছু তিনিসহ তার কর্মচারীরা করে থাকেন। আদর করে ষাঁড়টির নাম রেখেছেন পাহাড়ি বুল। অনেক সময় শুধু বুল বলেও ডাকা হয় ষাঁড়টিকে। বগুড়া শহরতলীর বনানী এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে তোলা ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। ফার্মে সাড়ে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দাম করেছেন এক ক্রেতা। কিন্তু মালিক ষাঁড়টি এ দামে ছাড়তে নারাজ।
তার দাবি, এ দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান গুণতে হবে। তাই ষাঁড়টিকে দেখে-শুনে বিক্রি করতে চান তিনি।
সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটের প্রধান ফটক দিয়ে হাটের ভেতরে প্রবেশ করে কিছু দূর যেতেই অসংখ্য গরুর মাঝে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি বড় আকারের ষাঁড়ের। এ স্থানে হাটের বড় বড় ষাঁড়ের বেচাকেনা হয়ে থাকে। তার মধ্যে পাহাড়ি বুল নামে বড় ষাঁড়টির দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিক্রেতা। ষাঁড়টিকে দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ আবার নেড়েচেড়ে দেখছিলেন।
মা-বাবা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বাংলানিউজকে জানান, তার ডেইরি ফার্মের অন্যান্য গরুর পাশাপাশি এ ষাঁড়টিকে জন্মে পর থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে লালন-পালন করে আসছেন তারা। বেশ আদর ও যত্নে বড় করা হয়েছে পাহাড়ি বুলকে। সময় মতো তিনবেলা খাবার (ভুষি, ভূট্টার আটা, ধানের গুড়া, নেপিয়ার ঘাস, খুদ, খৈই, চিটাগুড়) সঠিক সময়ে খাইয়েছেন। পাহাড়ি বুল একদম গরম সইতে পারে না। তার মাথার ওপর ২৪ ঘণ্টাই ফ্যান চালানো থাকে। আর দিনে দুই থেকে তিনবার গোসল করানো হয় পাহাড়ি বুলকে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে গরুটির পেছনে তার জন্মের ১ম বছর প্রায় ৭০-৯০ হাজার টাকা, ২য় বছর ১ লাখ টাকা ও ৩য় বছর ১ লাখ ২০০ হাজারসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিশাল দেহী ষাঁড়গুলো হাটে তোলা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত তারা বাজারদর অনুসারেই বিক্রি করতে চান পাহাড়ি বুলকে। তবে বাজার যাচাই করেই বিক্রি করা হবে। এতে লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন, মেনে নেবেন তিনি।
এদিকে গরুটিকে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। কেননা বড় গরু কেনার মতো সচরাচর ক্রেতা ও পাইকার মিলছে না। তাই বিশাল আকারের গরুটি নিয়ে হাটে বেশ বিপাকেই আছেন ফার্মের স্বত্বাধিকারীসহ কর্মকর্তারা।
বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদিপশু কোরবানিযোগ্য করে তোলেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় (৩৪২০ জন খামারি) ৪৪ হাজার ৯৩৯টি, গাবতলীতে (৩০৩৯ জন খামারি) ৪০ হাজার ৩৯৩টি, সারিয়াকান্দিতে (৪৪৪৩ জন খামারি) ৩৮ হাজার ৮০৭টি, সোনাতলায় (৩৭৭৮ জন খামারি) ২৯ হাজার ১৮৮টি, শিবগঞ্জে (৪৪৬০ জন খামারি) ৪৩ হাজার ৮৪৫টি, কাহালুতে (২৪৯৬ জন খামারি) ৩৫ হাজার ৩১২টি, দুপচাঁচিয়ায় (৫৬৩০ জন খামারি) ৩২ হাজার ১৯৭টি, আদমদীঘিতে (২৪৩৪ জন খামারি) ৩০ হাজার ৬২টি, নন্দীগ্রামে (২২৬০ জন খামারি) ২৪ হাজার ৩৫৭টি, শেরপুরে (৫৩০৪ জন খামারি) ৪১ হাজার ১৮০টি, ধুনটে (৩৮৪৪ জন খামারি) ৩৭ হাজার ৭০৫টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় (৪৯০৭ জন খামারি) ২৯ হাজার ৩১০টি গবাদিপশু রয়েছে।
এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বদল ও গাভী) ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৮টি, মহিষ ১ হাজার ৭৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮টি এবং ভেড়া ২৮ হাজার ২২৬টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে। তাই ঈদে কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না বরং চাহিদার অতিরিক্ত রয়েছে।
তিনি জানান, বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যেন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার না করেন সেজন্য ইতোপূর্বেই প্রচারণা চালানো হয়েছে।
হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে মেডিক্যাল টিম বসানো হয়েছে। জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে স্ব-স্ব প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এ কাজের দেখভাল করছেন।
জেলার কোরবানিযোগ্য ছোট-বড় গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে এমন মন্তব্যও করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
এএটি