কুড়িগ্রাম: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী উপজেলার হাটগুলোতে বিশাল দেহের উঁচু-লম্বা ভারতীয় গরুগুলো নজর কাড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতা ও পাইকারদের। দেশি গরুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় ভারতীয় গরুর দিকেই ঝুঁকছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকার ভূরুঙ্গামারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, সূঁচালো লম্বা লম্বা শিং উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল দেহী ভারতীয় গরুগুলো। এছাড়াও ভারতীয় ছোট জাতের অনেক গরু হাটে থাকলেও সেগুলো মিশে গেছে দেশি গরুর সঙ্গে। তবে বড় বড় ভারতীয় গরুগুলোই যেন শোভা বাড়িয়েছে হাটের। বাইরের ক্রেতাদেরও টানছে এই গরুগুলোই।
মাঝারি সাইজের একটি দেশি গরু (১০০ কেজি) কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে ৭০/৭৫ হাজার টাকা। অথচ অন্তত তিনগুণ বড় সাইজের ভারতীয় একটি গরু (২৫০-২৮০ কেজি) মিলছে দেড় লাখ থেকে পৌনে ২ লাখ টাকায়। মূল্যে এই তারতম্যের কারণে দেশীয় গরু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পাইকার ও ক্রেতারা। এ অবস্থায় দেশি গরু পালনকারী গ্রামীণ কৃষক এবং ছোট-বড় খামারিরা পড়েছেন বিপাকে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তের মানুষজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, সীমান্তের নদীপথ ও দুর্গম এলাকার কাঁটা তাঁরের বেড়া নেই এমন স্থান দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু পাচার হচ্ছে।
তারা আরও জানান, ভারতীয় ও বাংলাদেশি দালালরা রাতের আঁধারে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত পথ দিয়ে গরু পাচার করে আনছেন। কিছু কিছু গরু আটকও করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সেগুলো আবার নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকার টঙ্গী এলাকার আব্দুস সাত্তার ভূরুঙ্গামারী হাটে গরু কিনতে এসে বাংলানিউজকে জানালেন, হাটে তার নজর কেড়েছে বিশাল দেহী ভারতীয় গরু। কোরবানি দেওয়ার জন্য এক জোড়া গরু কিনবেন তিনি। পাইকাররা দাম হাঁকছেন ৪ লাখ। তিনি দেড় লাখ বলেছেন, দরদাম চলছে ।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার স্থানীয় একজন ক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, দেশি জাতের ছোট একটি গরু (৮০ কেজি) কিনেছেন ৬০ হাজার টাকায়।
গতবছরের থেকে এবারে অনেক বেশি দামে কিনতে হলো বলে জানালেন তিনি। ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নলেয়া গ্রামের খামারি আনারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পশু খাবারের দাম বেশি হলেও একটি লাভের আশায় অনেক কষ্ট করে ১২টি গরু পালন করেছি। কোরবানির হাটে বেচতে এনে দেখি ভারতীয় গরু হাট দখল করে আছে। সারা বছরের পরিশ্রম আমাদের বিফলে যাচ্ছে।
ভূরুঙ্গামারী সদরের কামাত আঙ্গারীয়া গ্রামের আরেক খামারি আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানালেন, হাটে ভারতীয় গরু থাকায় সারা বছর ধরে লালন-পালন করা গরুগুলোর ভালো দাম বলছেন না ক্রেতারা। তাই বাধ্য হয়ে শেষ মুহূর্তে অনেক কম দামে গরুগুলো বেঁচে দিতে হচ্ছে।
এভাবে ক্ষতির মুখে পরায় ভবিষ্যতে খামারিরা গরু পালন বন্ধ করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারী দেন ওই খামারি। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী চর ভূরুঙ্গামারী গ্রামের ভারতীয় গরু বিক্রেতা জালাল উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, সীমান্তবর্তী গ্রামের কৃষক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে আমরা ভারতীয় গরুগুলো কিনি। দুটো পয়সা লাভের জন্য সেগুলো হাটে বিক্রি করার জন্য। তারা কীভাবে ভারত থেকে গরুগুলো নিয়ে আসে তা জানি না।
কুড়িগ্রাম জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বাংলানিউজকে জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় এক হাজার ৭০টি খামারে ৯ লাখের বেশি গরু রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে কুড়িগ্রামে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার।
কুড়িগ্রাম- ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মুত্তাকীম বাংলানিউজকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবি সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় গরু যাতে সীমান্ত দিয়ে না আসতে পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২২
এফইএস/এএটি