বরিশাল: বরিশালে পশুর হাটে ক্রেতাদের সমাগম ঘটছে। যদিও আরও সপ্তাহখানেক আগে থেকেই স্থানীয় খামারিদের ফার্ম ও গৃহস্থলির গরু বাড়িতে বসেই বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
আর যারা এসব জায়গা থেকে গরু সংগ্রহ করেননি, তারাই মূলত হাটগুলোতে আসছেন। আবার বেশিরভাগ হাটেই ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে মাঝারি আকারের গরুর সংগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা।
যদিও গরু বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখনও ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি, তবে কোরবানির ঈদের আগের দিন বিক্রি সর্বোচ্চ হবে বলে মনে করছেন তারা।
তবে ক্রেতারা বলছেন, দর সাধ্যের মধ্যে না হওয়ায় যাচাই-বাছাই করতে আরও সময় নিচ্ছেন। আবার অনেকে গরুর দামে হতাশ হয়ে ছাগলের দিকেও ঝুকছেন।
বরিশালের রূপাতলীর হাট থেকে গরু কিনে নাসির নামে এক ক্রেতা বলেন, হাট শুরুর দিকে যে দর চাওয়া হচ্ছিলো তার একদিনের ব্যবধানে এখন আকার ভেদে গরুর দাম ৫-১০ হাজার টাকা কম চাচ্ছে বিক্রেতারা। যদিও গতবারের থেকে এবারে কিছুটা দাম বেশি বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে জুয়েল নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, যেভাবে দিনে দিনে গরুর দাম বাড়ছে, তাতে এবার ছাগল কোরবানি দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। আর তাই গরু নয় ছাগল কিনতেই হাটে এসেছেন তিনি।
এদিকে পরিসংখ্যান বলছেন, গত কয়েকবছরের চেয়ে এবারে বরিশালে গৃহস্থলির পাশাপাশি খামারির কাছ থেকে কোরবানির গরু কেনার প্রতি আগ্রহ বেশি রয়েছে ক্রেতাদের। যেখানে কেজি দরে বিক্রির জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আকার ভেদে কেজি ৪২০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে পড়ছে।
ক্রেতাদের চাহিদার কারণে এরইমধ্যে প্রায় ২০০টি ষাঁড় বিক্রি করা বরিশালের এমইপি অ্যাগ্রো খামারের ইনচার্জ রাফিউর রহমান অমি বাংলানিউজকে বলেন, শতভাগ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা তাদের খামারের প্রতিটি গরু লাইভ ওয়েটের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এককথায় ক্রেতারা খামারে এসে তাদের গরু পছন্দ করেন, তারপর সেটিকে ওজন দিয়ে কেজিপ্রতি দর হিসাব করে দাম নির্ধারণ করা হয়। আর এতে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ না থাকায় ক্রেতারা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
এবারে কেজি দরে গরু কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি জানিয়ে নগরের গড়িয়ার পার এলাকার কেমিস্ট অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেডের ইনচার্জ মোর্শেদ আজমল সুজন বাংলানিউজকে বলেন, খামারে ১০ প্রজাতির ২০০ গরু ছিল, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে লাইফ ওয়েটের মাধ্যমে।
ঝামেলাবিহীন হওয়ার পাশাপাশি প্রতারিত বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকা বর্তমানে খামার থেকে গরু কেনায় আগ্রহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নূরুল আলম বলেন, বরিশাল জেলায় বর্তমানে কয়েক হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে।
এবারে স্থানীয় গবাদি পশুর মাধ্যমেই কোরবানির চাহিদা মিটবে জানিয়ে নূরুল আলম বলেন, বরিশাল জেলায় এক লাখ আট হাজার ১১৮টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৪২৩টি পশুর। ফলে ৬৯৫টি উদ্বৃত্ত থাকা পশু জেলার বাহিরের হাটে যাবে।
এদিকে বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় বিভিন্ন গৃহে পালিত গরুর বিক্রি ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
অপরদিকে বরিশাল নগরের রূপাতলী অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদার সাফিন মাহমুদ তারিক বলেন, তাদেরসহ নগরের হাটগুলো জমতে আরও দুই দিন সময় লাগবে। কারণ বিগত দিন থেকেই রেওয়াজ রয়েছে কোরবানির ঈদের দুদিন আগে বরিশালের হাটগুলো জমে ওঠার।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল আলম বলেন, নগরে ভ্রাম্যমাণ টিমের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন হাটে তাদের ৩০টি টিম তদারকিতে রয়েছে। তারা রোগাক্রান্ত পশু দেখলে সেটির বিক্রি বন্ধ করে দেবেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত মোট ৬২টি পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনে স্থায়ী একটি এবং অস্থায়ী দুটি মিলিয়ে মোট তিনটি এবং জেলা প্রশাসন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৫৯টি হাটের অনুমতি দিয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৪২টি উপজেলায় এবার প্রায় চার লাখ ৬২ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার রয়েছে। প্রায় চার লাখ ৭০ হাজারটি বিভিন্ন ধরনের প্রাণি প্রস্তুত রয়েছে বিভিন্ন খামার পর্যায়ে। এর বাইরে গৃহস্থ পর্যায়ে কোরবানির জন্য আরও গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এমএস/আরআইএস