নওগাঁ: ব্রিটিশ সরকারের আমলে বাণিজ্যিকভাবে গাঁজা চাষ শুরু হয় নওগাঁয়। জেলাকে তিনটি সার্কেলে ভাগ করে গাঁজা চাষ হতো জেলায়।
এরই ধারাবাহিকতায় চাষিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯১৭ সালে গঠন করা হয় এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় গাঁজা উৎপাদনকারী পুনর্বাসন সমবায় সমিতি। সমিতির সদস্য সংখ্যা মোট ৫৪০। কিন্তু ১৯৭৪ সালে এটিকে মাদক বিবেচনায় বাণিজ্যিক কারবার বন্ধে জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ১৯৮৪ সালের ২৫ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয় বাণিজ্যিকভাবে গাঁজা চাষ। এরপর থেকে জেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে গাঁজা চাষের জমি, প্রায় ৪০টি পাকা ভবন, হিমাগারসহ শত কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভবন দোতলা।
এর মধ্যে পাঁচটির মতো পাকা ভবন সরকারিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাঁজার বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে-মোট আবাসিক স্থাপনা ২৫টি, শহরে ভেতরে চারটি ও বাইরে তিনটি পুকুর, একটি বিশাল দিঘি, ২২টি স্টাফ কোয়ার্টার, পাঁচটি মার্কেট, একটি, গাঁজা হিমাগার এবং গাঁজা সংরক্ষণ করার গোলা। কিছু ভবন পরিত্যক্ত রয়েছে। কোয়ার্টারগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ভবনে নওগাঁর সরকারি বিভিন্ন দফতরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকেন। পুকুরগুলো বিভিন্ন মেয়াদে লিজ দেওয়া আছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এ সমিতির কমিটি নেই। এজন্য জেলা প্রশাসক এসব দেখভাল করছেন। লিজ বা ভাড়াবাবদ প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ জানা যায়নি। তবে সমিতির নামেই এসব সম্পদ ভাড়া বা লিজ দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটি করে শিগগিরই যাবতীয় অর্থ ও দায়িত্ব কমিটিকে দেওয়া হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্তিপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটা সময় গাঁজা চাষ করতাম। গাঁজা চাষের টাকায় সংসার চলত আমার। শুধু সংসার নয়, গাঁজা চাষের টাকায় তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করেছি। সেই সন্তানরা আজ বড় জায়গায় চাকরি করছে। বেশ কয়েক বছর গাঁজা চাষ করেছে এ জেলার কৃষকেরা। সে সময় বেশ লাভজনক ছিল গাঁজা চাষ। যদিও হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন গাঁজা চাষিরা।
গাঁজা চাষের সঙ্গে জড়িত আরেক কৃষক সুলতানুল আলম মিলন বাংলানিউজকে জানান, তার বাবা গাঁজা চাষ করতেন। সেই সময় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনিও গাঁজা চাষের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একটা সময় গাঁজা চাষকে কেন্দ্র করে অনেক টাকার সম্পদ গড়ে ওঠে জেলায়। কিন্তু সেসব সম্পদ এখন বেদখলের পথে। অধিকাংশ জমি, ভবন এখন নামে বেনামে দখল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, গাঁজা চাষকে কেন্দ্র করে সে সময় তৈরি করা হয় বিশাল গাঁজা রাখার গোলা, তৈরি করা হয় হিমাগার। গাঁজা চাষের সঙ্গে জড়িতদের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয় চিকিৎসালয়। কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল স্টাফ কোয়ার্টার। বড় অফিস ঘর। যেগুলোর বেশ কিছু সম্পদ এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে কালের সাক্ষী হয়ে। তবে এরই মধ্যে কিছু সম্পদ দখল হয়ে গেছে। কিছু সম্পদ অবহেলায় পড়ে আছে। দেখার কেউ নেই। যদিও নিয়ম অনুযায়ী সদস্যদেরই সমবায় সমিতি পরিচালনার কথা, কিন্তু নানা জটিলতায় তা এখন প্রশাসনের হাতে।
মাসুদুর রহমান রতন নামে এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, গাঁজাকে ঘিরে নওগাঁ শহরজুড়ে যেসব সম্পদ রয়েছে, এর থেকে প্রাপ্ত অর্থের লভ্যাংশ সমিতির সদস্যরা পান না। এগুলো পুরোটাই এখন বেদখল হয়ে গেছে। সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং সদস্যরা যাতে করে এসব সম্পদের লভ্যাংশ পায়, সেজন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। এসব সম্পদ সঠিক দেখভালের জন্য কমিটি প্রয়োজন। প্রশাসনের সুনজর দাবি করছি।
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, গাঁজা সোসাইটির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। দ্রুতই নির্বাচনের মাধ্যমে উপযুক্ত কমিটি করা হবে। যাতে করে এসব সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার এবং দেখভাল হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এসআই