জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তন আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া।
গ্রাজুয়েটদের দাবি, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি হওয়ার কারণে সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
গ্রাজুয়েটরা জানান, রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইটের কারিগরি ত্রুটি, ফাংশনের জটিলতা, হল ক্লিয়ারেন্সের ভোগান্তি ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে নির্ধারিত সময়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেননি তারা। এ ছাড়া টাকা দিয়ে আগে মূল সার্টিফিকেট তুললেও সমাবর্তন রেজিষ্ট্রেশনের জন্য পুনঃরায় বাড়তি টাকা লাগায় অনেকে রেজিষ্ট্রেশন করেননি।
জাবি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ষষ্ঠ সমাবর্তন আগামী শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনে নিয়মিত স্নাতক সম্পন্নকারী ১২ হাজার ৪৬৮ জন, স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১০ হাজার ৩৭১ জন, সান্ধ্যকালীন কোর্সের ৮ হাজার ৭৫ জন ও এমফিল-পিএইচডি সম্পন্নকারী ৮০২ জনসহ মোট ৩১ হাজার ৭১৬ জন গ্রাজুয়েট অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
সমাবর্তন রেজিস্ট্রেশন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা এদিন (১৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যামকে জানান, সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্রাজুয়েট। এর মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন ও উইকএন্ড প্রোগ্রামের তিন হাজার ৪৬১ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন রয়েছেন।
সে হিসেবে সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেননি প্রায় ১৬ হাজার ৪৯৭ জন গ্র্যাজুয়েট। তাদের কেউই সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানান সমাবর্তন ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য।
সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন ফি ধরা হয় অনার্স ২৫০০ টাকা, মাস্টার্স ২৫০০ টাকা। আবার অনার্স-মাস্টার্স উভয় একসঙ্গে ৪০০০ টাকা। এছাড়াও সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ৮০০০ টাকা, এমফিল ডিগ্রি ৬০০০ টাকা ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্য ৭০০০ টাকা সমাবর্তন ফি নির্ধারণ করা হয়।
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নূর এ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমিসহ পরিচিত অনেকেই টাকার জন্য চাকরির অনেক সার্কুলারে আবেদন করতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করে বেসরকারি চাকরিও পাচ্ছি না। এই মুহূর্তে আমার জন্য সমাবর্তন বা সার্টিফিকেটের জন্য এই টাকা যোগাড় করা একেবারে অসম্ভব। সমাবর্তনের আনন্দ না হয় পয়সাওয়ালাদের। কিন্তু সার্টিফিকেটগুলোতো আমার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল। এগুলো যদি টাকা দিয়েই কিনতে হয়! তাহলে এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করে কি হলো? অথচ দুইটা সার্টিফিকেট তৈরিতে ১০০ টাকাও খরচ হবার কথা না। তাহলে আমাকে কেন এর জন্য এতোগুলো টাকা গুণতে হবে?
সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-আহ্বায়ক সায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জন্য সমাবর্তন ফি অনেক বেশি হয়ে গেছে। আমরা একটা আবেদনও করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর। কিন্তু প্রশাসন আমাদের আবেদন আমলে নেয়নি। সান্ধ্যকালীন কোর্সে যারা পড়াশোনা করেন, সবাই যে ধনী এমনটাও না। সমাবর্তন ফি বেশি হওয়ায় সান্ধ্যকালীন কোর্সের অনেক শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না।
‘অতিরিক্ত’ নিবন্ধন ফির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান বাজার দর অনেক বেশি। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বাজেটের পুরো অংশ দেয় না। এজন্য প্রতি বছরেই আমাদের ঘাটতি বাজেট রাখতে হয়। তবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা অনেক কম নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
এনএস