ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ফুলপরীকে নির্যাতন: ভিডিও ধারণকৃত মোবাইল উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু

ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
ফুলপরীকে নির্যাতন: ভিডিও ধারণকৃত মোবাইল উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের দ্বারা র‍্যাগিংয়ের নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনার ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার হয়নি অভিযুক্ত হালিমা খাতুন উর্মীর মোবাইলে করা নির্যাতনের ভিডিও। তবে প্রশাসনের নির্দেশে উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।


 
জানা গেছে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আসার পর মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য গত ৭ মার্চ ইবি থানা বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছে প্রশাসন। ফুলপরীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেদিন নির্যাতনের ভিডিও করার সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত কমিটি। যেখানে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উর্মীর নাম উঠে আসে। তার মোবাইল দিয়েই সেদিন নির্যাতনের ভিডিও করা হয়।

বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, আমরা গত ০৬ মার্চ উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছি। এরপর তাতে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া আছে সবগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গত ৭ই মার্চ মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইবি থানার ওসি বরাবর লিখিত চিঠি দিয়েছেন। পরে থানা থেকে ওই শিক্ষার্থীর বেশকিছু তথ্য চাওয়া হয়, কিন্তু ৭, ৮, ৯ এবং আগামী ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ওই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং মোবাইল নম্বর বা অন্যান্য বেশকিছু তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আগামী শনিবার একাডেমিক শাখা থেকে ওই তথ্যগুলো দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা হবে। তবে মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  

এ বিষয়ে ইবি থানার ওসি আননূর যায়েদ বিপ্লব বলেন, আমরা চিঠিটা পেয়েছি। তবে কত তারিখ পেয়েছি মনে করতে পারছি না। চিঠিটা পেয়েই আমরা মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রেখেছি।

অভিযোগ ওঠে, ঘটনার রাতে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হালিমা আক্তার ঊর্মির স্মার্টফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়। জানা যায়, ঊর্মি ‘অপ্পো সি-ওয়ান’ মডেলের একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন। ওই ফোনেই ভিডিও ধারণ করা হয় বলে দাবি ভুক্তভোগীর।  

ঘটনার পর থেকে তিনি আর সেই ফোন ব্যবহার করছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্মি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ডায়না চত্বরে অনুষ্ঠানে স্টেজ পারফরম্যান্স করার সময় আমার ফোনটি হারিয়ে গেছে। জিডি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আগেও ফোন হারিয়েছে। এজন্য আর জিডি করা হয়নি।

এর আগে গত ৬ মার্চ উচ্চ আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায় সে রায়ের কপি সেদিনই তাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। রায়ের কপিতে ছাত্রী নির্যাতনের ভিডিও ধারণকারী হালিমা খাতুন উর্মীর মোবাইল ফোন উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়।  

জানা যায়, বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতির রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমার পর কয়েক দফা নির্দেশনা দেন আদালত।

প্রসঙ্গত গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে। অভিযোগ ওঠে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা ফুলপরীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।

তার সহযোগীরা হলেন- ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোয়াবিয়া জাহান।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা তাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। সেই সঙ্গে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে তদন্ত কমিটি করার নির্দেশ দেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তার নির্যাতনের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন এটারও প্রমাণ মেলে।  

প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করা হয়।

তদন্তে নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় গত ১ মার্চ সানজিদাসহ পাঁচ অভিযুক্তকে ক্যাম্পাস থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে সেদিনই হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার ও গত ৪ মার্চ তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ চায় প্রশাসন। এর আগে তাদের হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।