ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

টাকা পাচার করে জার্মানি-ইংল্যান্ডে বাড়ি, বানোয়াট বললেন বাকৃবির সাবেক ভিসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
টাকা পাচার করে জার্মানি-ইংল্যান্ডে বাড়ি, বানোয়াট বললেন বাকৃবির সাবেক ভিসি

ময়মনসিংহ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সদ্য সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু অর্থ পাচার করে জার্মানি ও ইংল্যান্ডে দুটি বাড়ি করেছেন-এমন অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুদক।  

তবে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু।

       

এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি ও অবৈধ আয়ের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি, ১৭/জি উত্তরায় দুটি ফ্ল্যাট, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে বাড়ি এবং নিজ জেলা বরিশালেও বিপুল সম্পদ গড়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন বাকৃবির সহকারী অধ্যাপক ইসফাক আহাম্মেদ।    

গত ৩১ মে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল) উত্তম কুমার মণ্ডল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

চিঠিতে এ দুদক কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, বাকৃবির সদ্য সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ চলতি বছরের ২৯ মার্চ দুদক ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দায়ের হয় (অভিযোগ নং- ২৮/২০২৩)। প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর গত ৩১ মে চিঠি দেওয়া হয়েছে।        

লিখিত অভিযোগে সহকারী অধ্যাপক ইসফাক আহাম্মেদ দাবি করেন, প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয়ে গোন্ডেন রাইস প্রকল্পে পরামর্শক (কনসালটেন্ট) হিসেবে কাজ করেছেন। এতে অবৈধভাবে প্রায় আট কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে কাজে যাতায়াতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ও জ্বালানি ব্যবহার করে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন।              

একই সঙ্গে প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার পর দুটি বাসা দখলে রেখে এবং এতে পাহারা বসিয়ে প্রায় ৭৬ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। এছাড়া তিনি নিজের আত্মীয়কে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।                

ইসফাক আরও দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু। এতে তার ছেলেরাও জড়িত। এছাড়াও লুৎফুল হাসান মন্টু নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিয়ে তাদের লাঞ্ছিত করেছেন।

তবে এসব অভিযোগ বানোয়াট ও ভুয়া বলে দাবি করেছেন প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যিনি নিজেকে সহকারী অধ্যাপক দাবি করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া অভিযোগ করেছেন, তিনি নিজেই অস্তিত্বহীন। এ নামে কোনো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। তবে পূর্বচালে আমার ছয় ডেসিমেল জমি আছে, বরিশালে পৈত্রিকসূত্রেপ্রাপ্ত জমিতে ছোট একটি বাড়ি আছে এবং ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরে পৈত্রিকসূত্রেপ্রাপ্ত জমি আছে। এর মধ্যে বোনদের অংশের কিছু জমি আমি কিনেছি। এর বাইরে পৃথিবীর কোথাও আমার বাড়ি নেই।                      

এসময় চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ধান গবেষণায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে সেখানে আমি তিন বছর পরামর্শক ছিলাম। এটা নিয়ম মেনেই করেছি। তাছাড়া আমার কোনো ঠিকাদার আত্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেনি।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ হয়েছিল। এটি শুরু করেছিলেন আগের ভিসি। তবে আমার সময়ে দুটি পৃথক নিয়োগ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে কোনো ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি।  

তিনি দাবি করেন, মূলত আমার দায়িত্বের সময়ে কেউ হয়তো কোনো সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়েছে। আর এ কারণেই হয়তো আমাকে হয়রানি করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও অভিযোগকারী সহকারী অধ্যাপক ইসফাক আহাম্মেদকে পাওয়া যায়নি।     

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. ওয়ালিউল্লাহ জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিইসি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ইসফাক আহাম্মেদ নামে কোনো শিক্ষক নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩

এসআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।