ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

রং তুলির আঁচড়ে চারুকলায় চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

ফাহিম হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৪
রং তুলির আঁচড়ে চারুকলায় চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলার জয়নুল আর্ট গ্যালারির পাশে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বসে একমনে আঁকছেন অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের আল ফুরকান নয়ন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি উপন্যাসের চরিত্র বিনোদিনী ও আশালতাকে বাংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত সরাশিল্পে চিত্রিত করছেন তিনি।

লোকশিল্পের আদলে এরমধ্যে তিনটি সরাচিত্র এঁকেছেন ফুরকান।

বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ ঘিরে ফুরকানের মতো ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এবার নববর্ষ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন অনুষদের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ভাগ হয়ে সকাল থেকে রাত অব্দি কর্মযজ্ঞ পালন করছেন এই শিক্ষার্থীরা।

গত ২১ মার্চ বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার এই প্রস্তুতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান। এবছর কবি জীবনানন্দ দাশের 'তিমির হননের গান' কবিতা থেকে আমরা তো তিমিরবিনাশী বাক্যটিকে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতুড়ি পেরেকের অনবরত ঠক ঠক শব্দ, বিভিন্ন মাপে কাঠের কাটাকাটিতে তৈরি হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান মোটিফ। এবছর অন্তত তিনটি বড় মোটিফ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। বনরুই, বেজি ও গন্ধগোকুলের মিশ্রণে তৈরি একটি, হাতি, ও টেপা পুতুলের আদলে বাকি দুটি মোটিফ তৈরি হচ্ছে।  

এসময় একমনে টেপা পুতুলে ছোট ছোট বাঁশের টুকরো লাগাতে দেখা যায় মিস্ত্রি মজিবুর রহমানকে। গত ২৮ বছর ধরে চারুকলার এই কাজে তিনি জড়িত রয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে বলেও জানান তিনি।  

চারুকলার পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় অবস্থিত কক্ষের নাম ‘পাখিঘর’। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির আদলে মুখোশ তৈরি হচ্ছে। তার মধ্য বাঘের মুখায়ব, প্যাঁচা, ফল ও রাজা-রানিরসহ একাধিক মুখোশ তৈরি করছেন শিক্ষার্থীরা। রঙিন কাগজের ওপর বিভিন্ন নকশা এঁকে তৈরি হচ্ছে এসব মুখোশ। পাখি তৈরিতে ব্যস্ত প্রাচ্যকলা বিভাগের ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুকৃতি আদিত্যের সাথে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, প্রতিবারই সবচেয়ে প্রবীণ ব্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেন। তবে আমাদের সঙ্গে অন্যান্য ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার আগের দিন পর্যন্ত আমাদের কাজ চলবে।  

আর্ট গ্যালারির পাশে আঁকাআঁকিতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কেউ সরায় আকছেন কাল্পনিক চিত্র, কেউ জলরঙের দিয়ে আঁকছেন বাংলার গ্রাম-মাঠের বাহারি ছবি। এসময় সরাচিত্র আঁকতে দেখা যায় ৩১ ব্যাচের কারুশিল্প বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া মাহজাবিন লাইবাকে। প্রথমবারের মতো বর্ষবরণের উৎসবে কাজ করে পেরে তিনি রোমাঞ্চিত।

তিনি বলেন, আমি পদ্মফুলের আদলে একটি সরা এঁকেছি, নাম দিয়েছি পদ্মরাগ। এছাড়া একটি ঘুমন্ত মেয়ের ছবি ও একটি পাতার ছবি এঁকেছি। এই কাজগুলো আমাকে অনেককিছু শেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।

আঁকাআঁকির অপরপাশেই রয়েছে বিক্রয়কেন্দ্র। সেখানে টুইন পাখি, ছোট প্যাঁচা, বড় প্যাঁচা, বাঘের মাস্ক, বিভিন্ন ধরনের সরাচিত্র, রাজা-রানির মাস্ক, হাতপাখা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব বিক্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নাফিস আল নোমানের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, ২১ মার্চ থেকে এই শিল্পকর্ম বিক্রি শুরু হয়েছে।  এগুলো বিক্রির টাকা দিয়েই আয়োজনের খরচের যোগান দেওয়া হয়।

তবে এবছর তূলনামুলক বিক্রি কম বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এবছর ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ হওয়ায় বিক্রি কম। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আগে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেকেই কিনতে আসতেন।

সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য ঈদের আগেই কাজ শেষ করে ফেলা। সেই লক্ষ্যেই কাজ এগোচ্ছে। চার তারিখ থেকে ছুটি শুরু হয়ে যাবে, তা নিয়ে আমরা একটু চিন্তায়ও আছি। অন্ততপক্ষে আমরা তিনটি বড় মোটিফ তৈরি করব। এর বাইরে ছোট মোটিফ তো থাকবেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।