ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

দোকানদার ছাড়াই চলছে দোকান!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২৪
দোকানদার ছাড়াই চলছে দোকান!

ঠাকুরগাঁও: জানমালের সুরক্ষায় কত কী না করে মানুষ। দরজায় তালা ঝোলানোতেও সন্তুষ্ট থাকা যায় না।

বাড়ি, জমি, দোকানপাটের চারিপাশে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়। রাখা হয় নিরাপত্তারক্ষী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা দোকানে থাকেন বিক্রেতা ও তার সহকারী। এসব স্থানে বর্তমানে আধুনিক সিসি ক্যামেরাসহ উন্নত সব প্রযুক্তির ব্যবহারও করেন কেউ কেউ।  

আর এসবই করা হয় সম্পদ রক্ষার খাতিরে, যেন কিছু চুরি না যায়।  

তবে মানুষ সৎ থাকলে ও পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস রাখলে যে এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনোটারই দরকার পড়ে না তা একরকম বুঝিয়ে দিয়েছে ‘সততা স্টোর’। যেই দোকানে মিলছে নানান পণ্য, কিন্তু নেই কোনো দোকানদার বা মালামাল পাহারার কোনো লোকও নেই সেখানে। যে যার মতো পণ্য কিনে নিজেই বাক্সে দাম পরিশোধ করছে। অর্থাৎ দোকানদার ছাড়াই চলছে দোকান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুগার মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই এই দোকানটি স্থাপিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সততা শেখাতে ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের উদ্যোগে ও অর্থায়নে এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে।  

বুধবার (৬ নভেম্বর) ‘সততা স্টোর’ উদ্বোধন করেন দুদকের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান।   

‘দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি মানব না, দুর্নীতি সইব না’— স্কুলের শিক্ষার্থীদের এই গানের মধ্য দিয়ে ‘সততা স্টোর’- এর উদ্বোধন শেষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়।  

পরে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাজাহান কবিরের সভাপতিত্বে স্কুল মাঠে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্যালয়টিতে স্থাপিত ‘সততা স্টোর’ শিক্ষার্থীদের জন্য নানা জাতীয় টিফিন-কেক, বিস্কুট চানাচুর, লজেন্স এবং খাতা, কলম, পেন্সিল, রাখা হয়েছে। প্রতিটি পণ্যের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা পছন্দমাফিক পণ্য কিনবে এবং সততার সঙ্গে বাক্সে টাকা রেখে যাবে। এতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রজীবন থেকেই সততার সঙ্গে কাজ করতে অভ্যস্ত হবে।  

এ সময় বক্তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত এসব ‘সততা স্টোর’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরস্পরে সৎ হওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। এটা একটা শুভ ও ইতিবাচক দিক পরিবর্তন, সততার চর্চা। এভাবেই শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় গুণগত পরিবর্তন আসবে।

তারা আরও বলেন, বস্তুত ‘সততা স্টোর’ সততা চর্চার একটি প্লাটফর্ম। এটি একটি প্রতীক। নতুন প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং অল্প বয়স থেকেই দুর্নীতিবিরোধী নৈতিকতায় উদ্বুদ্ধ করার মহান উদ্যোগ। সৎ মানুষ তৈরির মিশন।

‘সততা স্টোর-এর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো- বিবেক জাগ্রত করার শিক্ষা। সৎভাবে চলার অনুশীলন কেন্দ্র। দৃশ্যতঃ এখানে বিক্রেতা নেই। এই দোকানের প্রকৃত বিক্রেতা হলো- বিবেক, নৈতিকতা, সততা, চরিত্র, মনুষ্যত্ব ও সর্বোপরি সত্যিকারের মানুষ হওয়ার সিঁড়িতে আরোহণ। একইভাবে সততা স্টোরের সবচেয়ে বেশি মূল্যবান পণ্যটিও কিন্তু বিবেক, নৈতিকতা, সততা, চরিত্র, মনুষ্যত্ব ও সত্যিকারের মানুষ হওয়ার সিঁড়িতে আরোহণ। ’ 

বক্তারা আরও বলেন, বিশ্বের নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর একটি প্রিয় বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার ওপরের দিকে। আমাদের বিশ্বাস দেশের কোনো বিবেকবান নাগরিকই দেশকে এ অবস্থানে দেখতে চায় না। এ অবস্থার পরিবর্তন কাম্য। আর কাঙ্ক্ষিত এই পরিবর্তনের জন্য সম্মিলিতভাবে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।  

এ সময় অন্যান্য মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক, ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহিন আক্তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।