ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

সীমা নামে পরীক্ষা দিচ্ছেন রীমা! 

মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
সীমা নামে পরীক্ষা দিচ্ছেন রীমা! 

নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক অনিতা রাণীর বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ উঠেছে।  

নাম ও বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ছাত্রী কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে চলমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু। ১৭, ১৯ ও আজ ২২ ডিসেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, সীমা নামের ছাত্রীর পরীক্ষা দিচ্ছেন রীমা। স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে মেলে বেশ কিছু অনিয়মের তথ্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী নিয়োগ ছাড়াই রীমা বেগম নামে একজনকে আয়া পদে কাজ করাচ্ছেন। তবে রীমার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং চাকরির বয়স না থাকায় তথ্য গোপন করে তাকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই ভোকেশনাল শাখায় বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স ট্রেডে ভর্তি করান। রীমা বেগম উপজেলার পাকা ইউনিয়নের মাড়িয়া এলাকার তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী। ওই নারীর ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে দেখা যায়, তার নাম মোছা. রীমা বেগম, বাবার নাম মাম্মাদ আলী ও মায়ের নাম মোছা. মালেকা বেগম এবং তার জন্ম তারিখ ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৭।

তবে এ তথ্য গোপন করে তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সেই শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন কার্ডেও তার নাম পরিবর্তন করে মোছা. সীমা আক্তার দেওয়া হয়েছে। তবে বাবা-মায়ের নাম সঠিক রাখা হলেও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১০ ডিসেম্বর ১৯৯৮ করা হয়েছে। চলমান ভোকেশনাল পরীক্ষায় বাগাতিপাড়া কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন রীমা বেগম। তার পরীক্ষার হাজিরা যাচাই করে দেখা যায়, সেখানে রীমা বেগম সীমা নামে স্বাক্ষর করেছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে রীমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রীমার বাবা-মায়ের সীমা নামের কোনো মেয়ে নেই। এলাকাবাসীদের মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় এ রকম অনিয়ম নিয়ে উপজেলার সচেতন মহল, অভিভাবক ও ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে রীমা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী বলেছেন, সার্টিফিকেট ছাড়াতো চাকরি দেওয়া সম্ভব না। একটা এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট হলে এ প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়োগ এলে চাকরি দেওয়া যেতে পারে। আমার সঙ্গে খুব দুর্নীতি করা হয়েছে। আমাকে কাজ করিয়ে তেমন কোনো টাকা দেওয়া হয় না। শুধু আশা দিয়ে রাখছে সরকারি নিয়োগ এলে চাকরি দেওয়া হবে।  

তিনি আরও বলেন, বয়স কমানোর জন্য নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ভর্তি হয়েছি এবং সেভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছি। সার্টিফিকেটটা হলে সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভোটার আইডি কার্ডের নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করব।

প্রধান শিক্ষক অনিতা রানী জানান, ওর নাম রীমা তবে জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ড পরিবর্তন করে পরে ওর নাম সীমা করেছে।  

তবে পরে তিনি আবার জানান, তার জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডে রীমা নামই রয়েছে। তবে সীমা নামে কীভাবে রেজিস্ট্রেশন ভুল করে হয়েছে, সেটি সংশোধন করে দেওয়া হবে। বয়স কীভাবে ভুল করা হলো- এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক জানান, প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ভর্তি কমিটি থাকে যাদের মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। তবে এ প্রতিষ্ঠানে কোনো ভর্তি কমিটি না করেই প্রধান শিক্ষক অনিয়ম করে ভর্তি নিয়েছেন। কোনো রেজুলেশন ছাড়াই তিনি রীমাকে আয়া হিসেবে কাজ করাচ্ছেন। এ রকম অনেক অনিয়ম রয়েছে।

এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। বিষয়টি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।