ঢাকা, বুধবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

শিক্ষা

‘ফেলানী পানি পানি করে অনেকবার চিল্লাইছিল, বিএসএফ কোনো পরোয়া করে নাই’

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৫
‘ফেলানী পানি পানি করে অনেকবার চিল্লাইছিল, বিএসএফ কোনো পরোয়া করে নাই’

‘আমার মেয়ে পানি পানি করে অনেকবার চিল্লাইছিল আমার সামনে, কিন্তু বিএসএফ পরোয়া করে নাই। ’ এভাবেই মেয়ের মৃত্যুর সময়কার ঘটনা স্মরণ করছিলেন ২০১১ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে নিহত ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম।

 

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা জানান।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানী। এসময় দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল।

নূরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার থাকতে আমি বিচারের জন্য আবেদন করেছি। তারা কোনো বিচার করেনি। শুধু আশ্বস দিয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আমাদেরকে এত চাপে রেখেছে, কারও সঙ্গে কথাও বলতে দেয়নি। তাই নতুন সরকারের কাছে অনুরোধ, ফেলানীকে যেভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদেরও একইভাবে শাস্তি দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, নতুন সরকার যেন বিচার করে। আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। এখন থেকে ভারতের সাথে চোখে চোখ তুলে কথা হবে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমীদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী বলেন, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য লজ্জাজনক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। আগামী দিনে কেউ যেন বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের দিকে আর চোখ তুলে তাকাতে না পারে, সে উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। ফেলানী থেকে শুরু করে সীমান্তে যত বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতে সকল হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আজিজুল হক, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ প্রমুখ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।  

এদিকে ফেলানী দিবসে সীমান্তে হত্যা ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা। সমেবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক নানা ছুতোয় বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা; এটা বাংলাদেশের মানুষের মানবিক মর্যাদাকে স্বীকৃতি না দেওয়ার অন্যতম নিয়ামক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত যেভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে, তার ভেতর দিয়ে তার ভেতর দিয়েই তারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে শোষণ-বঞ্চনার জায়গায় পাকাপোক্ত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের সীমান্তের সংকট স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। ভারতকে বলব, আপনারা পলিসি পাল্টান, ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ুন। নাহয় নতজানু সম্পর্কের কারণে ভবিষ্যতে আপনাদের পস্তাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ফেলানীকে ৩-৪ ঘণ্টা জীবন্ত কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যদি ন্যূনতম সম্মান থাকতো, তাহলে তারা ফেলানীকে নামিয়ে অন্তত চিকিৎসার ব্যবস্থা করত। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তা শিকার করে না। কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে বড়জোর গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু আর একবার বাংলাদেশের মানুষের উপর বন্দুক ধরলে বাংলাদেশের মানুষ সে বন্দুক চুরমার করে দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সীমান্ত হত্যার বিচারে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তে, নদীতে, পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত যেভাবে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আসে, যদি কেউ ভারতের দালালি করার জন্য বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ তাকে প্রতিহত করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যত চুক্তি হয়েছে, তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে হয়নি। সকল গোপন চুক্তি উন্মোচন করতে হবে। যেসব চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। আমাদের ন্যায্য হিস্যা আমাদেরর বুঝিয়ে দিতে হবে।

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের তিনদিকে একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিরাজ করছে। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে সীমান্তে পাখির মতো হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজ ১৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে, ফেলানী হত্যার বিচার হয়নি। প্রতিবছর আমরা দাঁড়াই, প্রতিবাদ করি। কিন্তু বিচার হয় না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাব, আপনারা ভারতের কাছে সীমান্ত হত্যার বিচার চাইবেন। যদি তারা বিচার না করে, তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করবেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের পাশে থাকবে।

সমাবেশে তারা ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও জনগণ’, ‘সীমান্তে হত্যা কেন’, ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি চলবে না’সহ একাধিক প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৪
এফএইইচ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।