ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে জাবি শিক্ষার্থীদের মিছিল

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪
বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে জাবি শিক্ষার্থীদের মিছিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জাহানারা ইমাম হলের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তবে অতীতের মতোই স্বাভাবিক নিয়মে কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ।



গত ৭ ডিসেম্বর জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শ্যামল কুমার রায় স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী হলের গেট রাত ১০টায় বন্ধ করা হবে। গেট বন্ধ হয়ে গেলে কোনো শিক্ষার্থী হলের বাইরে যেতে পারবে না বা বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। বিভাগীয় কোনো কাজে উলে¬খিত সময়ের পর বাইরে থাকতে হলে অন্তত একদিন পূর্বে বিভাগীয় সভাপতির সুপারিশসহ আবেদন করতে হবে। তাছাড়া হলের শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করার সুবিধার্থে নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

অন্য আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলে কোনো ছাত্রীর উপস্থিতি ৭৫ শতাংশ না হলে তার পরীক্ষার আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করা হবে না।

এ নিয়মের প্রতিবাদের বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় সব হলের ছাত্র ও ছাত্রীরা একযোগে মিছিল বের করে। মিছিলটি জাহানারা ইমাম হল থেকে শুরু হয়ে ফজিলাতুন্নেসা হল, উপাচার্যের বাসভবন ঘুরে শেখ হাসিনা হলের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। মিছিলে উপস্থিতির অধিকাংশই ছাত্রী।

এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট থেকে শুরু হয়ে ছাত্রী হলগুলো প্রদক্ষিণ করে পরিবহন চত্বরে এসে শেষ হয়।

দুপুরে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সংগঠক মাসুক হেলাল অনিক স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটা দেশের সংস্কৃতি তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আমাদের দেশের সংস্কৃতি তৈরিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি একে বাংলাদেশের ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’র এ অভিধা দেখেই বুঝা যায় এর অগ্রগণ্য অবস্থান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার রক্ষায় সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

বর্তমানে খুব হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন ভাবে ছাত্রীদের স্বাধীনতা খর্ব করাসহ, হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আর অন্যদিকে ছাত্র হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব চলছে এবং সিট বণ্টনে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ নেই। শিক্ষার্থীদের  মূল্যবোধ গড়ে তোলায় সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চার আয়োজন করা এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ না করে, অহেতুক ছাত্রী হলে খবরদারি-নজরদারি কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি জাহানারা ইমাম হল, শেখ হাসিনা হলসহ মেয়েদের প্রত্যেকটা হলে অনৈতিকভাবে ছাত্রীদের উপর বিভিন্ন নিয়ম কানুন আরোপ করা হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে মেয়েরা হল প্রশাসন কর্তৃক হয়রানির শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এ ছাত্র নেতা।

এ সব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

প্রগতিশীল ছাত্র জোটের দাবিগুলো হলো, অ্যাটেনডেন্সের জন্য কোনো রকম হয়রানি করা যাবে না, ১০টার পর হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বাতিল করতে হবে।

এদিকে অতীতের মতোই স্বাভাবিক নিয়মে কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ।

তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো বিধিনিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। কোনো একটি নির্দিষ্ট হলে তথ্যগত গ্যাপ বা ইন্সস্ট্রাকশন দিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বা অসতর্ক ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি, অতীতে যে রকম স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল সেটা যেন বহাল রাখা হয়। মেয়েদের চলাফেরা থেকে শুরু করে মেয়েদের স্বাধীনতা সবকিছুই আগের মতো থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।