ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি মেনে নিচ্ছে সরকার!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি মেনে নিচ্ছে সরকার!

ঢাকা: কর্মবিরতিসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচির মুখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আর বেতন বৈষম্য নিরসনে এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি পূরণের বিষয়ে শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দেশে ফিরলে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে নেওয়া হবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ।  

পদমর্যাদা ও বেতন বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো অনুমোদনের পর দাবির বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ায় কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

আগের সপ্তম বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত’ অধ্যাপকরা সচিবের সমান গ্রেড-১ স্কেলে বেতন পেতেন। জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা গ্রেড-২ এবং অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ এ বেতন পেতেন।

অষ্টম বেতন কাঠামোতে ‘সিলেককগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক’ পদটি বিলুপ্ত করে সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের সচিবদের সমান গ্রেড-১ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য নতুন একটি বিশেষ গ্রেড তৈরি করে সরকার।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, আমলারা নিজেদের জন্য বিশেষ গ্রেড তৈরি করলেও শিক্ষকদের সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত করা হয়। ফলে আমলাদের নিচের স্কেলে বেতন পাবেন অধ্যাপকরা।

ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর না হওয়া, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো গঠনে কমিশন ঘোষণা এবং শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত না আসায় বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।

‘যৌক্তিক’ দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা কার্যকরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ঈদের পর লাগাতার কর্মবিরতির আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আল্টিমেটামের বিষয়টি জানানো হয়।

দাবি পূরণ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার হুমকিও এসেছে। সিলেকশন গ্রেড ছাড়াও টাইম স্কেল নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে।

শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান একই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে মধ্যস্থতা হয়নি। এতে শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছিলো বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এরই মধ্যে সরকার শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি যৌক্তিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে তা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, সমস্যা সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।

শিক্ষকদের দাবি পূরণের বিষয়টি জানালেও কোন কোন বিষয় পূরণ হচ্ছে তা স্পস্ট করেননি অতিরিক্ত সচিব। শিক্ষকদের দাবি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানান হেলাল উদ্দিন।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি পুনর্গঠন করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই প্রজ্ঞাপনে অর্থমন্ত্রীকে কমিটির আহ্বায়ক করে শিক্ষামন্ত্রীকেও সদস্য করা হয়েছে।

পুনর্গঠিত এ কমিটি জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনিষ্পন্ন কেসগুলো পর্যালোচনা, বেতন স্কেলে বৈষম্যের বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযোগপরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও এ সংক্রান্ত অন্য বিষয় পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মন্ত্রী শুক্রবার দেশে ফিরলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সচিবদের সঙ্গে যে বৈষম্য তা নিরসন করার চেষ্টা চলছে।

সরকারি সফরে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের উদ্দেশ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করেন শিক্ষামন্ত্রী। ফিনল্যান্ড থেকে তিনি শুক্রবার দেশে ফিরবেন বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।