ঢাকা: দাবি পূরণে কোন সমঝোতা ছাড়াই শেষ হলো শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুই ঘণ্টার বৈঠক। চলতি মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা।
আর শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, শিক্ষকদের মর্যাদা এবং বেতন বৈষম্যের বিষয়টি তিনি বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত পুর্নগঠিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন।
স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং অষ্টম বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের পদমর্যাদার অবনমনের অভিযোগের জেরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ বৈঠকে দৃশ্যত কোনো সমঝোতা না হলেও শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষক নেতারা আশা করছেন, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালসহ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে একই আলোচনার টেবিলে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি সম্মান রেখে আমরা লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষায় হাত দেইনি।
তিনি বলেন, আমাদের সম্মানের জায়গায় হাত দেবেন না, বেতন না দেন সমস্যা নেই। মর্যাদার সুষ্ঠু সমাধান না হলে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার চাপ রয়েছে। আমরা মনে করি, সে কর্মসূচিতে যাওয়া লাগবে না। আশা করি এর মধ্যে সুষ্ঠু সমাধান হবে।
দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়া হবে বলে জানান ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষিত হলে লাগাতার কর্মবিরতি পালন ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষক নেতা বলেন, বেতন বৈষম্য নিরসনে সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটির মধ্যে অর্থমন্ত্রী ছাড়া সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল না। দাবি মেনে নিলে কমিটিকে অভিনন্দন জানাবো।
শিক্ষকদের মর্যদা এবং বেতন কাঠামো নিয়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার সমাধানে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের মান, ইজ্জত, সম্মান আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য যে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন তা পুর্নগঠিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি, সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে।
শিক্ষকরা ভর্তি, ক্লাস-পরীক্ষাসহ একামেডিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন, আমাদের ওপর তাদের আস্থা আছে- বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
গত ৭ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদনের পর পদমর্যাদা এবং বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য ক্লাস বর্জনসহ আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে ও বিশেষ গ্রেড সৃষ্টি করে বেতন-ভাতার দিক দিয়ে দৃশ্যত শিক্ষকদের চার ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা নিচে নামবে।
এমনকি বিদ্যমান ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সেও শিক্ষকদের মর্যাদাহানির বিষয়টি বহুল আলোচিত।
সরকারি কর্মকর্তারা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন ও উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি পান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার কিছুই পান না।
এসব বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি বেতন কমিশন গঠনের দাবি জানান শিক্ষক নেতারা।
স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে সিনিয়র অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা গ্রেড-১, অধ্যাপকদের গ্রেড-২, সহযোগী অধ্যাপকদের গ্রেড-৩, সহকারী অধ্যাপকদের গ্রেড-৫ ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো সপ্তম গ্রেডে নির্ধারণ করার দাবি জানানো হয়।
প্রস্তাবিত গ্রেড-১ প্রাপ্ত সিনিয়র অধ্যাপক থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষককে সুপার গ্রেডের দুই নম্বর ধাপে বেতন-ভাতা প্রদানের দাবি জানান শিক্ষকরা।
আর রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে শিক্ষকদের প্রত্যাশিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়।
এর আগে শিক্ষকরা গত ২ ও ৬ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসলেও সমাধান আসেনি। তবে সরকার এর মধ্যে বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি পুর্নগঠন করেছে।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দু’একজন শিক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর
** ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে’
** বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী