ঢাকা: পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা খর্ব করে পরীক্ষা নিয়ে মেধার ভিত্তিতেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বছর জাতীয়-বিভাগ-জেলা-উপজেলা-থানাওয়ারী মেধাক্রম প্রণয়ন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়েই এ পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
এরপর শূন্যপদ অনুযায়ী মেধা তালিকার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির অনুমোদনক্রমে পরবর্তী পঞ্জিকা বছরে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়োগযোগ্য পদের একটি চাহিদাপত্র উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠাবে’।
‘৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইউএনও সব প্রতিষ্ঠানের চাহিদাপত্র একীভূত করে তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষকদের চাহিদাপত্র এনটিআরসিতে জমা দেবেন’।
‘এনটিআরসিএ প্রতি বছর সকল পরীক্ষা গ্রহণ করে চাহিদা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক জাতীয়-বিভাগ-জেলা-উপজেলা-উপজেলাওয়ারী মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফল ঘোষণা করবে’।
‘প্রতিষ্ঠান প্রধান ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির অনুমোদনক্রমে প্রথম প্রবেশ পদে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগের দুই মাস আগে জনবল কাঠামোয় নির্ধারিত কোটার প্রাপ্যতা এনটিআরসিতে পাঠাবে। এনটিআরসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে এবং নিবন্ধিত প্রার্থীরা আবেদন করবেন’।
‘শিক্ষকদের চাহিদা অনুযায়ী এনটিআরসিএ মেধানুযায়ী উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে প্রার্থীর তালিকা করবে। উপজেলায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে জেলা মেধা তালিকা এবং তাতেও প্রার্থী না মিললে বিভাগীয় মেধা তালিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে’।
নতুন নিয়মে উপজেলা থেকে বিভাগীয় মেধা তালিকায়ও যদি যোগ্য প্রার্থী না যায়, তবে তবে জাতীয় মেধা তালিকা বিবেচনা করা হবে।
বিভাগীয় সদর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রার্থী অগ্রাধিকার পাবেন। বিভাগীয় তালিকায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে জাতীয় মেধা তালিকা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে জাতীয় মেধা তালিকা অনুসরণ করা হবে। কর্মরত কোনো শিক্ষক যদি অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে চান তবে তাকেও অন্য আবেদনকারীদের মতোই মেধাক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা হবে’।
এর আগে যারা মেধা তালিকা ছাড়াই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের নিবন্ধন সনদে উল্লিখিত ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য মেধাক্রম নির্ধারণ করতে হবে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
এ পদ্ধতি কেবলমাত্র প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের (এন্ট্রি লেভেল) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সহকারী প্রধানসহ যেসব পদে নিয়োগের জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে সেসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে না।
গত ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করে, যার ফলে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্যদের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়।
বিধিমালা সংশোধন করে গত ১১ নভেম্বর থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন পদ্ধতিতে আপত্তি জানিয়ে আসলেও গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক আলোচনায় নতুন নিয়মের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দেন শিক্ষাবিদরা। নতুন পরিপত্র জারি করে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের আদেশটি বাতিল করা হয়েছে।
এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত ৬ লাখ প্রার্থী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাদের মধ্যে ৬৪ হাজার ৩২২ জন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর