ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবিতে নানা আয়োজনে সেলিম আল দীন প্রয়াণদিবস

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
জাবিতে নানা আয়োজনে সেলিম আল দীন প্রয়াণদিবস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ‘তোমার সম্মুখে অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়া পথ’ স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নাট্যকার সেলিম আল দীনের ৮ম প্রয়াণদিবস পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে।

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিস্থলে এসে শেষ হয়।



শোভাযাত্রায় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন, রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আফসার আহমদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দেশের খ্যাতিমান সংগঠক, নিদের্শক, নাট্যকর্মী, সেলিম আল দীনের গুণগ্রাহীরা অংশ নেন।

শোভাযাত্রা শেষে সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সেলিম আল দীনের সহধর্মিণী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, আরশিনগর থিয়েটার, ঢাকা থিয়েটার, বুনন থিয়েটার, তালুকনগর থিয়েটার, নাট্য সংসদ, বাংলাদেশের পুতুল নাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক সংগঠন সুস্বর, রঙ্গন মাইম একাডেমি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সেলিম আল দীনের পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, নাট্য সাহিত্যে সেলিম আল দীনের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তার নাট্যকর্ম মানুষের মনে তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সমাধি তৈরি করে অমারা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছি। তবে সেলিম আল দীনের নাটকের ধারা অব্যাহত নেই বলে অস্বস্তি থেকেই গেছে। আমরা আশা করি মানুষ তাকে পাঠ করার মাধ্যমে এবং তার নাটক মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে তাকে স্মরণ করবে।

সেলিম আল দীনের সহধর্মিণী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা বলেন, আজকের দিনটি আমার কাছে যেমন আবেগময় ও অশ্রুধারা প্রবাহের দিন, তেমনি সবচেয়ে আনন্দের দিন। এই দিনটির জন্য আমি সাতবছর অপেক্ষা করেছি। সবার সহযোগিতায় আজ সেলিম আল দীনের সমাধি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

সেলিম আল দীন স্মরণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সেলিম আল দীন মুক্ত মঞ্চে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের পরিবেশনায় মঞ্চায়িত হবে তারাশঙ্করের নাটক ‘কবি’।

১৯৭৩ সালে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠার পর নাটক লেখার ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সেলিম আল দীন নিজস্ব এক নাট্যরীতির অনুসন্ধান চালিয়ে যান। প্রসেনিয়ামের গণ্ডিতে বাঁধা ইউরোপিয়ান নাট্য-আঙ্গিককে তিনি পরিত্যাগ করেন। খুঁজে বের করলেন বাংলা নাটকের হাজার বছরের পুরনো শিল্পরীতিকে। এ নাট্যরীতি আমাদের একেবারেই নিজস্ব। ছোটগল্প, উপন্যাস বা প্রবন্ধের মতো পাশ্চাত্যের প্রেরণাতাড়িত বিষয় নয়।

লুঙ্গিনুসের ‘অন সাবলাইম’ আর পিটার ব্রুকের ‘দ্য এম্পটি স্পেস’-এর মতো তত্ত্বগুলোর সঙ্গে তিনি সমন্বয় করতে চাইলেন প্রাচ্যের নান্দনিকতার। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রের নির্যাস ও বাংলা ভাষার মধ্যযুগের সাহিত্যরীতি থেকে পাওয়া শিল্প উদ্দীপনাগুলো, এমনকি শব্দপ্রতিমাকে নতুন করে জাগিয়ে তুললেন নিজের সৃষ্টিকর্মে।

সেলিম আল দীন গানকে বলতেন ‘কথাসুর’। টিভির জন্যও তিনি লিখেছেন বহু নাটক। তার লেখা ‘কীর্তনখোলা’ ও ‘চাকা’ নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্র।

সেলিম আল দীনের লেখা নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘সর্পবিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক’ (১৯৭৩), ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ (১৯৭৫), ‘বাসন’ (১৯৮৫) ‘মুনতাসির’, ‘শকুন্তলা’, ‘কিত্তনখোলা’ (১৯৮৬), ‘কেরামতমঙ্গল’ (১৯৮৮), ‘যৈবতী কন্যার মন’ (১৯৯৩), ‘চাকা’ (১৯৯১), ‘হরগজ’ (১৯৯২), ‘প্রাচ্য’ (২০০০), ‘হাতহদাই’ (১৯৯৭), ‘নিমজ্জন’ (২০০২), ‘ধাবমান’, ‘স্বর্ণবোয়াল’ (২০০৭), ‘পুত্র’, ‘স্বপ্ন রমণীগণ’ ও ‘ঊষা উৎসব’।
 
রেডিও ও টেলিভিশন প্রচারিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘বিপরীত তমসায়’ (রেডিও পাকিস্তান, ১৯৬৯), ‘ঘুম নেই’ (পাকিস্তান টেলিভিশন, ১৯৭০), ‘রক্তের আঙ্গুরলতা’ (রেডিও বাংলাদেশ ও বিটিভি), ‘অশ্রুত গান্ধার’ (বিটিভি, ১৯৭৫), ‘শেকড় কাঁদে জলকণার জন্য’ (বিটিভি ১৯৭৭), ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ (আয়না সিরিজ, বিটিভি ১৯৮২-৮৩), ‘গ্রন্থিকগণ কহে’ (বিটিভি ১৯৯০-৯১), ‘ছায়া শিকারি’ (বিটিভি ১৯৯৪-৯৫), ‘রঙের মানুষ’ (এনটিভি ২০০০-২০০৩), ‘নকশীপাড়ের মানুষেরা’ (এনটিভি, ২০০০), ‘কীত্তনখোলা’ (আকাশবাণী কলকাতা, ১৯৮৫)।
 
গবেষণাধর্মী নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘মহুয়া’ (ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে, ১৯৯০), ‘দেওয়ানা মদিনা’ (ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে, ১৯৯২), ‘একটি মারমা রুপকথা’ (১৯৯৩), ‘কাঁদো নদী কাঁদো’, ‘মেঘনাদ বধ’ (অভিষেক নামপর্ব)।
 
এছাড়া ১৯৯৪ সালে ‘চাকা’ নাটক থেকে এবং ২০০০ সালে ‘কীত্তনখোলা’ নাটক থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ‘একাত্তরের যিশু’ চলচিত্রের সংলাপ রচনা করেন ১৯৯৪ সালে।
 
সেলিম আল দীনের জাতীয়-আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননাগুলো হলো- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ঋষিজ প্রদত্ত সংবর্ধনা (১৯৮৫), কথক সাহিত্য পুরস্কার (১৩৯০ বঙ্গাব্দ), একুশে পদক (২০০৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), অন্য থিয়েটার (কলকাতা প্রদত্ত সংবর্ধনা), নান্দিকার পুরস্কার (আকাদেমি মঞ্চ কলকাতা ১৯৯৪),  শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাট্যকার (১৯৯৪), খালেকদাদ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার (১৯৯৪), মুনীর চৌধুরী সম্মাননা (২০০৫)।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।