ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

কোটা আন্দোলন

রাবি শিক্ষকের নীরব প্রতিবাদেও বাধা

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৮
রাবি শিক্ষকের নীরব প্রতিবাদেও বাধা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

রাবি: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুলাই) সকালে মমতাজউদ্দিন কলাভবনে নিজ চেম্বারে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তার সহকর্মীরা।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান তার ফেসবুকে খালি পায়ে হাঁটা ও জোহা চত্বরে একঘণ্টা অবস্থানের ঘোষণা দেন।

 

ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ আমি নগ্নপায়ে অফিসে যাবো। সকাল ১১ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জোহা স্যারের মাজারে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবো। খালিহাতে, নগ্নপায়ে এবং নীরবে যে কেউ যোগদান করতে পারেন। কোনও স্লোগান না, ফেস্টুন না, বক্তৃতা না, না কোনও রাজনীতি। এই নগ্নপায়ে নীরব প্রতিবাদ বোঝাবে আমরা আর সভ্য সমাজের নাগরিক নই, যেখানে বাকস্বাধীনতা আছে যেখানে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদের সুযোগ আছে। ’

এরপর সকালে ফরিদ উদ্দিন খান অফিসে আসলেও তাকে সেখান থেকে জোহা চত্বরে যেতে দেওয়া হয়নি। তার নিজ চেম্বারে অবরুদ্ধ করে রাখেন অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কেবিএম মাহবুবুর রহমান।

সূত্র জানায়, ফরিদ উদ্দিন অফিসে আসার পর বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান তার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সোয়া ১১টার দিকে তিনি শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খানের চেম্বার থেকে বেরিয়ে যান। এসময় তার চেম্বারের সামনে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী পদযাত্রায় যোগ দিতে শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ওই শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে ছাড়া সেখান থেকে যাবেন না বলে জানান।
 
এসময় ওই চেম্বারে শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাধা দেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কেবিএম মাহবুবুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের সহকর্মী লাঞ্ছিত হোক। তাই বিভাগের সভাপতি হিসেবে আমি তাকে বাধা দিয়েছি। ’ এসময় শিক্ষক ফরিদ পাঁচ মিনিটের জন্য সেখানে যাওয়ার অনুমতি চান। কিন্তু বিভাগের সভাপতি তাকে যেতে বাধা দেন।

এদিকে, ড. ফরিদের ডাকে সাড়া দিয়ে জোহা চত্বরে সমবেত হন কয়েকজন শিক্ষক। তারা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকিব, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেছুর রহমানসহ অনেকে। তারা সেখানে ১১-১২টা পর্যন্ত অবস্থান করেন।

একই সময়ে সেখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে যোগ দেন। তারা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান তাদের সেখান থেকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরেননি। পরে সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে প্যারিস রোড হয়ে প্রশাসন ভবনের দিকে আসছিলেন। কিন্তু সিনেট ভবনের সামনে আসতেই তাদের থামিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর প্রক্টর ও পুলিশ সংর্ঘষ এড়াতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন।

ফরিদ উদ্দিনকে বাধার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ফরিদ উদ্দিন আমার স্নেহভাজন, তাই অফিসে আসার পথে তার চেম্বারে গিয়েছিলাম। তাকে বুঝিয়েছি যে, তার যদি খারাপ লাগে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিবে। তাকে না আসার জন্যে বুঝিয়েছি, বাধা দিইনি। ’

প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে কোটা আন্দোলনের নামে এক মহল এই আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখানেও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।