ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভিকারুননিসার অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষক বরখাস্ত, এমপিও বাতিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৮
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষক বরখাস্ত, এমপিও বাতিল ব্রিফে বরখাস্তের কথা জানাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: অভিভাবকদের ডেকে অপমানের জের ধরে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহননের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত এবং তাদের এমপিও বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অরিত্রীর আত্মহননে প্ররোচণার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
 
অভিযুক্ত তিন শিক্ষক হলেন- ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৗস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরা এবং শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।


 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্তে শিক্ষার্থী আত্মহননের প্ররোচণার জন্য এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় বিভাগীয় মামলাসহ অন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তিনজন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
 
এছাড়া গভর্নিং বডির বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধে জড়িত থাকায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
 
পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে বাবা দিলীপ অধিকারীকে অপমানের জের ধরে সোমবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর শান্তিনগরের বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রী। ঘটনার পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কমিটি রাতদিন কাজ করে প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছি। প্রতিবেদনে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে যে সব অনিয়ম ও অসঙ্গতি রয়েছে সেগুলো উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন>>>শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাবো না, দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাক 

‘আমরা আরো অনেকগুলো অনিয়ম, অসঙ্গতির গার্ডিয়ান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পেয়েছি। ওখানে বহুদিন ধরে অধ্যক্ষ নেই, একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা নিয়ম অনুসরণ করে অধ্যক্ষ নিয়োগ করেনি। ফলে এটাও একটা বড় ধরনের অনিয়ম যে একজন পরিপূর্ণ অধ্যক্ষ নেই, এভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা নিয়মের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। একটা সংখ্যা নির্ধারিত আছে এই স্কুলের জন্য। ’
 
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শিফট ইনচার্জ (প্রভাতী শাখা) জিনাত আখতার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে তারা অভিযুক্ত করেছেন।


‘এখানে বলা হয়েছে, অরিত্রীর বাবা-মা যখন আবেদন নিয়ে আসলেন, তারা খুবই অসুস্থ। তাদের ভয়-ভীতি দেখান, অরিত্রীর বাবা-মায়ের সঙ্গে অধ্যক্ষ, শিফট ইনচার্জ নির্মম, নির্দয় আচরণ, অরিত্রীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। অরিত্রীর বাবা-মায়ের প্রতি অপমান এবং অসম্মানের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি বলেই তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। যার দায় কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিফট ইনচার্জ এবং শ্রেণি শিক্ষিকা এড়াতে পারেন না। সুতরাং, তাদের বিরুদ্ধে অরিত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী হিসেবে অভিযোগে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ’
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কমিটির সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় থেকে গভর্নিং বডির কাছে নির্দেশ দিচ্ছি, তাদের তিনজনকে বরখাস্ত করা হোক, করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অন্য বিভাগীয় মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এই তিনজন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করার জন্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
আদালতের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট সুয়োমোটো এনেছেন, মন্ত্রণালয়ের এডিশনাল সেক্রেটারিকে প্রধান করে পাঁচজনের কমিটি করার বিষয়টা জানতে পারছি। আজকের মধ্যে কমিটি করে ফেলবো।
 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যত ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সবাইকে আমরা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, আমাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত আমাদের কোন ছাত্র-ছাত্রীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না। এটা অপরাধ।
 
‘আহ্বান জানানচ্ছি, সব শিক্ষক এরকম নয়। ভালো শিক্ষক রয়েছেন। দরদি শিক্ষক রয়েছেন, শিক্ষার্থীকে ভালোবাসেন- তারা আরো বেশি এগিয়ে আসবেন, অন্য শিক্ষককে প্রভাবিত করবেন। ’
 
ম্যানেজিং কমিটিতে যারা আছেন তারা শুধু খবরদারি করার জন্য নয়, সার্বিকভাবে শিক্ষার উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের-শিক্ষকের গুণগতমান উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নে আরো বেশি করে নজর দেবেন।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় যে সব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবাই মিলে এসব বিষয়ে আরো বেশি নজরদারি করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।